এবারের ভোটে শুরু থেকেই পাদপ্রদীপে মেদিনীপুর আসন। কে দাঁড়িয়েছেন তার জন্য নয়, বরং কে লড়লেন না, সেটার জন্য। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে কেন ঠিক মেদিনীপুর থেকে দাঁড় করানো হল না, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। কঠিন আসনে জিতে সাংসদে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার হয়েছে কেন্দ্র বদল। মেদিনীপুর থেকে বিজেপির প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পাল। তিনি বর্তমানে আসানসোল দক্ষিণের বিধায়িকা। বিপক্ষে আরেক এমএলএ, সিনে জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকা জুন মালিয়া। এই দুই বন্ধুর লড়াইয়ে এবার সরগরম মেদিনীপুর। ভোট ২৫ জুন ষষ্ঠ দফায়।
লোকসভা কেন্দ্রটি মূলত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কিছু অংশ জুড়ে অবস্থিত। এগরা, দাঁতন, কেশিয়ারি, খড়গপুর সদর, নারায়ণগড়, খড়গপুর এবং মেদিনীপুর এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র গঠিত। ১৯৫১ সাল থেকেই এই কেন্দ্রে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বর্তমানেই কেন্দ্রটি তফশিলি জাতি বা উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত নয়। বিধানসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে কেবলমাত্র কেশিয়ারি তফশিলি উপজাতির প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ১৯৫১ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এই অঞ্চলের নির্বাচনী ফলাফল। ১৯৫২ সালের লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম নামেই কেন্দ্রটি পরিচিত ছিল। এই নির্বাচনে সারা ভারত ভারতীয় জনসংঘের পক্ষ থেকে দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এই কেন্দ্রে জয় লাভ করে। ১৯৫৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নরসিংহ মাল্লা জয়ী হন। ১৯৬২ সালের লোকসভা নির্বাচনে গোবিন্দকুমার সিংহ জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জয়ী হন ১৩ শতাংশের বেশি ভোটের মার্জিনে৷ ১৯৬৭ সালে মেদিনীপুর কেন্দ্রে জয়ী হয় বাংলা কংগ্রেসের এসএন মাইতি। তিনি ৪৩ হাজারের বেশি ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেন। ‘
১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে জয়ী হন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সুভাষচন্দ্র হাঁসদা। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি কংগ্রেসের হাতছাড়া হয়, ভারতীয় লোক দলের সুধীর কুমার ঘোষাল জয়ী হন। ১৯৮৯, ১৯৯১ ও ১৯৯৬, ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে পরপর পাঁচ বার সিপিআই প্রার্থী ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত সাংসদ নির্বাচিত হন মেদিনীপুর কেন্দ্র থেকে। এর পরবর্তী ২০০৪ এর লোকসভা নির্বাচনে সিপিআই প্রার্থী প্রবোধ পাণ্ডা এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। ২০০৯ সালে যেখানে সিপিআইএমের ভোট শেয়ার এবং আসন সংখ্যা কমে যায়, এই কেন্দ্রটি সেসময়েও সুরক্ষিত ছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্রটিতে প্রথমবারের জন্য জয়ী হয় তৃণমূল কংগ্রেস। গায়িকা সন্ধ্যা রায় ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রটি হাতছাড়া হয় তৃণমূল কংগ্রেসের। ভারতীয় জনতা পার্টির তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এই কেন্দ্রটি থেকে সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে ৮৮ হাজার ৯৫৫ ভোটে জয়ী হন।
এবার জুন, অগ্নিমিত্রা ছাড়াও লড়াইয়ে নেমেছেন সিপিআইয়ের বিপ্লব ভট্ট। গতবারও তিনি ছিলেন ময়দানে,একধাক্কায় ২৬ শতাংশ ভোট কমে হয়েছিল মাত্র চার শতাংশ। এবার মোটের ওপর রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা,বামেদের ভোট একটু হলেও বাড়বে। সেই ট্রেন্ড যদি মেদিনীপুরেও থাকে, তাহলে হয়তো কিছুটা হলেও সুবিধা হবে জুনের।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কোন দিকে ছিল হাওয়া। এগরা বিধানসভা কেন্দ্রটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তরুণ কুমার মাইতি জয় লাভ করেন। দাঁতন কেন্দ্রটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের বিক্রমচন্দ্র প্রধান ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থীকে মাত্র ৬২৩ ভোটে পরাজিত করেছিলেন। তফশিলি উপজাতি সংরক্ষিত কেশিয়ারি কেন্দ্রটিতে পরেশ মুর্মু ১৫ হাজার ৩৩০টি ভোটে জয়যুক্ত হন। খড়গপুর সদর কেন্দ্রটিতে হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায় ভারতীয় জনতা পার্টির পক্ষ থেকে ৩,৭৭১টি ভোটে জয়ী হন। নারায়ণগড় কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস ২৪০০ বেশি ভোটে জয়যুক্ত হয়। খড়গপুর কেন্দ্রটিতে বিনেন রায় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ৩৬ হাজারের বেশি ব্যবধানে জয়ী হন। সবমিলিয়ে বিধানসভায় তৃণমূলের কার্যত একচেটিয়া আধিপত্য ছিল এখানে। সেই ট্রেন্ডই থাকে নাকি অগ্নিমিত্রা সফল হন অগ্নিপরীক্ষায়, জানা যাবে ৪ জুন।