আওয়ামি লিগ এখনও নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়নি। তবে আওয়ামি লিগের নেতা মন্ত্রীদের একে একে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অনেকেই তাই অজ্ঞাতবাসে লুকিয়ে আছেন। এরই মাঝে সম্প্রতি আওয়ামি লিগের তরফ থেকে একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছিল। যদিও সেই সব কর্মসূচির জন্যে সবুজ সংকেত দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে মহম্মদ ইউনুসের সরকার। এদিকে আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠন - ছাত্রলিগ ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ। তবে সেই ছাত্রলিগই গতকাল রাতে রাস্তায় নেমে মিছিল করল কক্সবাজারে। (আরও পড়ুন: এই প্রথম! বেসরকারি মহাকাশ অভিযানে পাইলট হবেন ভারতীয় বায়ুসেনার অফিসার)
আরও পড়ুন: 'এতদিন বাংলাদেশে এই ধরনের হুমকি…', কলকাতায় সরস্বতী পুজোয় বাধা? বিস্ফোরক সুকান্ত
রিপোর্ট অনুযায়ী, স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ কক্সবাজারে ছাত্রলিগের বেশ কয়েকজন কর্মীসমর্থকরা রাস্তায় মিছিল বের করেন। তাঁদের হাতে ছিল ফ্লেক্স। মিছিলে পা মেলানো ছাত্রলিগ নেতাদের কারও মুখ ছিল মাস্কে ঢাকা। আবার অনেকের মুখই ছিল খোলা। এদিকে সেই মিছিল থেকে সরকার বিরোধী নানান স্লোগান ওঠে। তবে সেই মিছিল পুলিশ আটকায়নি। পরে এই মিছিলের প্রতিবাদে পালটা পথে নামে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দলন এবং জামাতের ছাত্র সংগঠন - ছাত্রশিবির।
এদিকে আওয়ামি লিগকে না নিষিদ্ধ ঘোষণা করছে, না তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে ইউনুসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকারের এহেন 'আজব অবস্থান' নিয়ে অবশ্য ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলমের যুক্তি, 'আওয়ামি লিগকে আগে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। তত দিন কোনও কর্মসূচি করতে দেওয়া হবে না। এটা সরকারের স্পষ্ট অবস্থান।' প্রসঙ্গত, আওয়ামি লিগের ছার সংগঠন 'ছাত্রলিগ' নিষিদ্ধ হয়েছে। তবে আওয়ামি লিগ নিষিদ্ধ নয়। এই আবহে থেকে থেকেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি আওয়ামি লিগকে নির্বাচনে লড়তে দেওয়া হবে? যদিও এই নিয়ে স্পষ্ট কোনও জবাব দিচ্ছে না কেউই। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে বল সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়েছে। এদিকে সরকারও এতদিন ধরে এই নিয়ে টালবাহানা জারি রেখেছে।
উল্লেখ্য, দেশজুড়ে ৬ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামি লিগ। এদিকে ১০ ফেব্রুয়ারিও ফের বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে। এরপর ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে হরতালের ডার দেওয়া হয়েছে। এদিকে এই সব কর্মসূচির ঘোষণা করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শেখ হাসিনাকেই বাংলাদেশের 'প্রধানমন্ত্রী' হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০২৪ সালের ৫ অগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে। এরপর থেকেই শেখ হাসিনার সরকারে থাকা বহু মন্ত্রী ধরা পড়েছেন। আবার বহু মন্ত্রী পালিয়ে গিয়ে অজ্ঞাতবাসে আছেন। তাঁদেরই একজন হলেন প্রাক্তন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক। সম্প্রতি তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে নাকি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'আওয়ামি লিগের কয়েক হাজার নেতাকর্মী এখন ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের অনেকের খাবার কিনে খাওয়ার মতো টাকাও নেই। তবে তৃণমূল স্তরে কর্মীদের মনোবল শক্ত আছে। বিদেশে আওয়ামি লিগের পক্ষে জনমত গঠনে সাহায্য করার জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে দলের নেতারা।'
মোজাম্মেল হকের আরও বক্তব্য, 'সিনিয়র নেতারা মনে করেন আমাদের সবার ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া উচিত। গত অগস্টে মাসে থানা থেকে লুট হওয়া হাজার হাজার ছোট অস্ত্র উদ্ধারের কোনও চেষ্টা করা হয়নি। আমাদের সন্দেহ সমুদ্রপথে আরও অস্ত্র বাংলাদেশে আসছে। পাকিস্তান যেমন একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, তেমনিভাবে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।' এদিকে রিপোর্ট অনুযায়ী, আওয়ামি লিগের প্রাক্তন সাংসদ নাহিম রাজ্জাক দাবি করেছেন, দলকে পুনরায় উজ্জীবিত করতে আলোচনা চলছে জোর কদমে। তাঁর দাবি, ৩০-৪০ জন প্রাক্তন মন্ত্রী এবং সাসংদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। সেই গ্রুপেরই এক সদ্য বাহাউদ্দিন নাসিম দাবি করেন, আত্মগোপনে থেকেও তিনি দেশের সব জেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।