মঙ্গলবার বেজিংয়ে সীমান্ত বিষয়ক ওয়ার্কিং মেকানিজম ফর কনসালটেশন অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশনের (ডব্লিউএমসিসি) বৈঠক হয় ভারত ও চিনের মধ্যে। সেখানে আন্তঃসীমান্ত নদী এবং কৈলাস-মানস সরোবর তীর্থযাত্রা সহ একাধিক বিষয়ে পুনরায় পারস্পরিক সহযোগিতা শুরু করার বিষয়ে আলোচনা করে দুই প্রতিবেশী দেশ। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) লাদাখ সেক্টরে সামরিক অচলাবস্থা অবসানের জন্য গত অক্টোবরে সমঝোতায় পৌঁছায় দুই দেশ। এর পর থেকে উভয় পক্ষের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা জারি আছে। তারই অংশ হিসাবে এই বৈঠকটি হয় বেজিংয়ে। বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য ভারত-চিন সহযোগিতা অপরিহার্য বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন। মোদীর সেই বক্তব্যের প্রশংসাও করেছিল চিন। এই আবহে মঙ্গলের বৈঠক বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে আজ চিন সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। তার আগেই বেজিংয়ে মুখোমুখি হয় ভারত-চিন। (আরও পড়ুন: ভারতের 'রিমোটলি পাইলটেড এয়ারক্রাফ্ট' হ্যাক করেছে চিন? মুখ খুলল সেনা)
বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গত ডিসেম্বরে বেজিংয়ে সীমান্ত প্রশ্নে বিশেষ প্রতিনিধিদের বৈঠকে যে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা রূপায়ণের জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে এই বৈঠকে। ভারতের তরফ থেকে বলা হয়, বৈঠকটি 'ইতিবাচক ও গঠনমূলক পরিবেশে' অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উভয় পক্ষ 'আন্তঃসীমান্ত নদী এবং কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রা সহ আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা পুনরায় শুরু করার বিষয়ে মতবিনিময় করেছে'। এদিকে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এগিয়ে নিতে কূটনৈতিক ও সামরিক বোঝাপড়া জোরদার করতে সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষ। (আরও পড়ুন: কক্সবাজারে মিলল একটা, দুটো নয়… আরাকান আর্মির ৬০ সেট ইউনিফর্ম,বাংলাদেশে কী হচ্ছে?)
আরও পড়ুন: সুর বদলে বড় ঘোষণা ট্রাম্পের, মার্কিন প্রতিশোধমূলক শুল্ক থেকে ছাড় পাবে ভারত?
এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর বেজিংয়ে শেষ বৈঠকে ডোভাল ও ওয়াং সীমান্তে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা পুনরায় শুরু করা, আন্তঃসীমান্ত নদী এবং সীমান্ত বাণিজ্য সম্পর্কিত তথ্য বিনিময় সহ আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও একমত হন তাঁরা। মঙ্গলের বৈঠকে সেগুলি নিয়েই আরও আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: বিতর্কের আবহে অভ্যুত্থান নিয়ে মুখ খুললেন বাংলাদেশি সেনা প্রধান খোদ, বললেন...
উল্লেখ্য, লাদাখের ডেপস্যাং এবং ডেমচকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সেনা প্রত্যাহার হয়েছে দিওয়ালির আগেই। ভারত ও চিন, দুই দেশের সেনাই যৌথ ভাবে সেখানে 'যাচাই পর্ব' চালিয়েছে। জানা গিয়েছে, ২০২০ সালের এপ্রিলের আগে যেখানে যার অবস্থান ছিল, প্রায় সেখানেই ফিরে গিয়েছে ভারত ও চিনা সেনার জওয়ানরা। এই আবহে লাদাখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে যে সব অস্থায়ী তাঁবু খাটানো হয়েছিল, তা খুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক বছর ধরেই ডেপস্যাং এবং ডেমচকে ভারতীয় সেনাকে টহলে বাধা দিচ্ছিল চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ। তবে রিপোর্টে দাবি করা হয়, এই দুই জায়গায় ভারতীয় সেনার টহলদারির অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে। প্রধানমন্ত্রী মোদী রাশিয়ায় ২০২৪ সালের ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার আগেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রক ঘোষণা করে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতের টহলের অধিকার মেনে নিয়েছে চিন। এই আবহে প্রায় পাঁচ বছর পরে লাদাখের ডেপস্যাং এবং ডেমচকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় টহলদারি নিয়ে জট কেটেছে।