প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার সময়সীমা হ্রাস করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এমনটাই জানিয়েছেন প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং। সম্প্রতি বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিং অভিযোগ করেছিলেন, 'প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহে নির্ধারিত সময়সীমা মানা হচ্ছে না।' আর তারপরেই বড় পদক্ষেপ করল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।
নয়াদিল্লিতে আয়োজিত প্রতিরক্ষা সম্মেলনে প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং বলেন, 'প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা কেবলমাত্র দেশের সামরিক দক্ষতা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি উন্নত ভারত গঠনের অন্যতম প্রধান শর্ত।'
তিনি জানান, '২০১৫ সালে ভারত ছিল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রতিরক্ষা আমদানিকারী দেশ, কিন্তু বর্তমানে ভারত শীর্ষ ২৫টি প্রতিরক্ষা রফতানিকারক দেশের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।' তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, ১০০-র বেশি ভারতীয় সংস্থা এখন মিসাইল, রকেট লঞ্চার, সিমুলেটর, সাঁজোয়া যান, ডর্নিয়ার বিমান, বিভিন্ন প্রকারের জাহাজ এবং সমুদ্র পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মতো প্রতিরক্ষা সামগ্রী বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে রফতানি করছে।
আরও পড়ুন-'ভারতে ফিরে...', বিতর্কের মাঝে কংগ্রেসের সতীর্থদের উদ্দেশে বার্তা শশী থারুরের
এরপরেই প্রতিরক্ষা সচিব জানান, 'প্রতিরক্ষা মন্ত্রক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার প্রক্রিয়ার সময়সীমা হ্রাসের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ইতিমধ্যেই সংস্কারের বছরে, ক্রয় চক্রের কিছু প্রক্রিয়ার সময়সীমা কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে প্রক্রিয়ার সময়সীমায় প্রায় ৬৯ সপ্তাহ সাশ্রয় হবে।'
তিনি বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে আহ্বান জানান যাতে তারা গবেষণা ও উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেয় এবং মূলধনী বিনিয়োগ, যন্ত্রপাতি ও প্রকৌশল সরঞ্জামের ক্ষেত্রেও বিশেষ জোর দেয়।প্রতিরক্ষা সচিব বলেন, 'প্রতিরক্ষায় আত্মনির্ভরতা কেবল দেশের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন রক্ষার জন্যই নয়, বরং উন্নত ভারতের বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
তিনি বলেন, ব্যয়-ভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ থেকে প্রতিযোগিতামূলক বিডিংয়ে স্থানান্তর, সরকারি খাতের ইউনিটগুলির জন্য পণ্য সংরক্ষণের মতো দিকগুলি অপসারণ এবং কঠোর, অপ্রয়োজনীয় পদ্ধতিগুলি বাদ দিয়ে ক্রয়ের সময়সীমা কমানোর মতো পদক্ষেপগুলি প্রতিরক্ষা শিল্প ভিত্তির প্রসার এবং বৈচিত্র্যের দিকে পরিচালিত করবে।
আরও পড়ুন-'ভারতে ফিরে...', বিতর্কের মাঝে কংগ্রেসের সতীর্থদের উদ্দেশে বার্তা শশী থারুরের
সম্প্রতি বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিং বলেন, প্রতিরক্ষা চুক্তিতে এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, যা পূরণ করা সম্ভব নয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'কেন আমরা এমন কিছু প্রতিশ্রুতি দেব, যা অর্জন করা সম্ভব নয়? চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ই আমরা কখনও কখনও জানি যে এটি সময়মতো বাস্তবায়িত হবে না, তবুও আমরা চুক্তি স্বাক্ষর করি। এতে পুরো প্রক্রিয়াটি বিকৃত হয়।'
এই প্রসঙ্গে তিনি হতাশা প্রকাশ করে উল্লেখ করেন, তেজস এমকে১এ যুদ্ধবিমান সরবরাহে বিলম্বের কথা। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হ্যাল)-এর সঙ্গে ৪৮ হাজার কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল সরকারের। চুক্তি অনুসারে ৮৩টি যুদ্ধবিমান দেওয়ার কথা ছিল ওই সংস্থার। প্রাথমিকভাবে ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে যুদ্ধবিমানগুলি সরবরাহ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত একটিও সরবরাহ হয়নি।তিনি এএমসিএ এবং তেজস এমকে২-এর প্রোটোটাইপ তৈরিতেও বিলম্বের কথা বলেন।