রাজ্য সরকার যখন একের পর এক চা–বাগান খুলে দিচ্ছে, চা–শ্রমিকদের কর্মসংস্থান করছে তখন এমন আবহে আবার বন্ধ হয়ে গেল আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি চা–বলয়ের মেচপাড়া চা–বাগান। এই ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। শ্রম দফতর একের পর এক চা–বাগানের সমস্যা মেটাচ্ছে। সেখানে চা–শ্রমিকরা চা–বাগানে কাজ করতে এসে দেখেন সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিশ ঝোলানো রয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার এই নোটিশ দেখে চোখে জল চলে আসে শ্রমিকদের। আজ লক্ষ্মীবারে এমন ঘটনার ফলে চা–বাগানে প্রায় ১৩০০ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়লেন।
আজ, বৃহস্পতিবার সকালে এসে যে এমন দৃশ্য দেখতে হবে তা কেউ কল্পনাও করেননি। তাই চা–শ্রমিকরা রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ কেঁদে ফেলেন। কেমন করে সংসার চলবে? নিজের কাছেই নিজে প্রশ্ন করেন চা–বাগানে শ্রমিকরা। আজ যখন তাঁরা কাজে আসেন তখন দেখেন চা–বাগানের ম্যানেজমেন্ট অনুপস্থিত, অফিস এবং ফ্যাক্টরিতে ঝুলছে সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিশ। চা–বাগান কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছেন, এই চা–বাগানে কাজের পরিবেশ নেই। কর্মীরা ঠিক মতো কাজ করেন না। বোনাস দেওয়ার সময় নির্দিষ্ট হওয়ার পরেও অবৈধভাবে পাঁচদিন ব্যাপী আন্দোলন করেছেন চা–শ্রমিকরা। আর তাই চা–বাগানের এই ‘খারাপ কর্মসংস্কৃতি’র জেরে চা–বাগান কর্তৃপক্ষ সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিশ ঝোলাতে বাধ্য হয়েছেন নোটিশে লেখা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘পরিবেশ দূষণ কমাতে বিদ্যুৎ চালিত এই ভেসেল’, কলকাতায় প্রথম চালু করে বার্তা মমতার
এমনিতে শুখা মরশুমে চা উৎপাদন বন্ধ থাকে। তখন শুধু চা–পাতা তোলার কাজ চলে। সেখানে এমন একটা সময়ে চা–বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরাসরি রুটি–রুজিতে টান পড়েছে চা–শ্রমিকদের। এই সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের নোটিশে যে কথা লেখা আছে তার সঙ্গে শ্রমিকরা একমত নন। এখানে কিছু মিথ্যের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে বলে চা–শ্রমিকদের দাবি। এখন কপালে ভাঁজ পড়েছে মেচপাড়া শ্রমিকদের। তাঁরা জানান, আজ বেতন দেওয়ার দিন ছিল। কিন্তু বেতন না দিয়ে চা–বাগান বন্ধ করে দিয়েছেন মালিক কর্তৃপক্ষ। এটা আসলে টাকা না দেওয়ার কৌশল। কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি করেছেন চা–শ্রমিকরা।
এই ঘটনা নিয়ে চা–শ্রমিকরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে কবে লিখবেন এবং কী লিখবেন সেসব এখনও ঠিক হয়নি। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলার নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন চা–শ্রমিকরা। এই বিষয়ে ‘টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’র ডুয়ার্স শাখার চেয়ারম্যান চিন্ময় ধর বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই মেচপাড়া চা–বাগানের শ্রমিকদের কর্মসংস্কৃতি তলানিতে ঠেকেছে বলে কানে আসছিল। ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে চা–শ্রমিকদের সাবধানও করা হয়। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। তাই চা–বাগান কর্তৃপক্ষ বাগান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন।’