নিচু তলার পুলিশ অফিসারদের একাংশ ঘুষ নিয়ে বালি - কয়লা পাচারে মদত করছেন বলে বৃহস্পতিবার নবান্নে বসে দাগিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর রাত পোহাতে না পোহাতে সাসপেন্ড হয়ে গেলেন পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনি থানার সাব ইন্সপেক্টর। মনোরঞ্জন মণ্ডল নামে ওই পুলিশ আধিকারিককে সাসপেন্ড করেছেন আসানসোলের পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী। সাসপেনশনের জেরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে পুলিশ মহলে।
আসানসোলের বারাবনি থানা এলাকায় কয়লাখনি রয়েছে। রয়েছে অজয় নদের বালি। সেই থানার অফিসার ইন চার্জ ছিলেন মনোরঞ্জন বাবু। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর কাছে পৌঁছয় সাসপেনশনের চিঠি। তাতে সাসপেনশনের কারণ হিসাবে তাঁর অপেশাদার আচরণের উল্লেখ করা হয়েছে। বিভাগীয় তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি সাসপেন্ড থাকবেন বলে জানানো হয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পর এই পদক্ষেপে প্রমাদ গুনছেন বহু পুলিশ আধিকারিক।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নবান্নে এক বৈঠকে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘রাজীব কুমারকে বলছি, কিছু জিনিসের প্রতি যত্ন নেও। হয়তো তুমি চেষ্টা করো, কিন্তু স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সাহায্য করছে না। সবাইকে বলছি না, একাংশ। পলিটিক্যাল নেতাদের নামে সবাই বদনাম করে বেশি। পাঁচ টাকা খেলে ৫০০ টাকা বলে দেয় চোর। পলিটিক্যাল নেতারা টাকা খাওয়ার আগে ১০ বার ভাবে। জনগণের টাকা খাওয়া কি উচিত? তাদের নিজস্ব একটা দায়বদ্ধতাও থাকে। কিন্তু নিচুতলার কিছু অফিসার, কিছু কর্মী, যারা এই গরমেন্টকে ভালোবাসে না এবং তোমার পুলিশেরও কিছু লোক, তারা টাকা খেয়ে আজকে বালি চুরি বলো, কয়লা চুরি বলো, সিমেন্ট চুরি বলো...।’
এর পরই যে কোনও চুরির ক্ষেত্রে পুলিশকে কড়া হওয়ার নির্দেশ দিয়ে মমতা বলেন, ‘চুরি হলে তখন বলবে কয়লা চুরি করছে তৃণমূল কংগ্রেস আর চুরি করবে CISF টাকা খেয়ে বা পুলিশের একাংশ টাকা খেয়ে আমি এটাকে টলারেট করব না। যদি কোনও রাজনৈতিক দলের লোকও খায় তার কলার চেপে ধরো। তাকে আইনের প্যাঁচে ধরো। আইনত জেলে পাঠাও। এখানে কোনও অজুহাত আমি শুনতে চাই না।’
আরও পড়ুন -‘হিন্দুদের উপর অত্যাচার নিয়ে নীরব মমতা!’ পুলিশের রদবদল নিয়ে বিস্ফোরক সুকান্ত
মমতার দাবি, ‘আমার দরকার নেই এক পয়সাও। বার বার আমি বলি। প্রয়োজনে আমি দলের নির্বাচন করানোর জন্য লোকের কাছে আঁচল পেতে টাকা নেব। আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারবে না কোনও সরকারের কাছ থেকে বা কারও কাছ থেকে আমি এক পয়সা নিয়েছি। কোনও কারণে। অন্য কেউ যদি নিয়ে থাকে তুমি ছাড়বে কেন? প্রত্যেকের জন্য আইন সমান ভাবে কার্যকর হওয়া উচিত। সেখানে কোনও বৈষম্য হওয়া উচিত নয়। কেউ কেউ ভাবে, একে ম্যানেজ করি, ওকে ম্যানেজ করি। করে তোলাবাজি করি। তারা বাঁচাবে। কেউ বাঁচাবে না। আমি তো বাঁচাব না। আমার কাছে কোথাও না কোথাও থেকে তো খবর আসবেই।’