শতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠান যেখানে শেষ করেছিলেন, সমাবর্তনে সেখান থেকেই শুরু করলেন। শুক্রবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে থাকল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা, অনুপ্রেরণা, আদর্শ। সঙ্গে জানালেন, কীভাবে দেশের অখণ্ডতা রক্ষার বার্তা দিয়েছিলেন বিশ্বকবি।অন্যবারের থেকে বিশ্বভারতীয় সমাবর্তন ছিল একেবারেই আলাদা। একে তো মাত্র ৪৮ ঘণ্টার নোটিসে আয়োজিত হয়েছে সমাবর্তন। তার মধ্যে যে পড়ুয়াদের জন্য এত আয়োজন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে তাঁদের ছাড়াই আয়োজিত হয় অনুষ্ঠান। তা নিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যেও ক্ষোভ ছিল। সেই বিষয়ে সম্ভবত আগেভাগেই জানতেন মোদী। সেইমতো ব্যাখ্যা করলেন, খুব ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও করোনা সুরক্ষা বিধির জন্য বিশ্বভারতীতে পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না তিনি। শুরুটা দেখে করার পর অবশ্য একেবারে 'রবীন্দ্রময়' ভাষণ শুরু করেন মোদী। তা এতটাই 'রবীন্দ্রময়' ছিল যে প্রথম ন'মিনিটে পাঁচটি কবিতা আবৃত্তি করে ফেলেন। আগেও সেরকম আবৃত্তি করে বাংলা উচ্চারণ নিয়ে ঠাট্টার মুখে পড়লেও বাংলা বিধানসভা ভোটের আগে রবীন্দ্র-ভাবাবেগ নিয়ে কোনওরকম আপস করছেন না মোদী। বরং রবীন্দ্রনাথের কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে জানালেন, দেশের একতা শক্তিশালী মজবুত করার ডাক দিয়েছিলেন কবিগুরু। সওয়াল করেছিলেন বৈচিত্রের পক্ষে।'মোদীর বক্তব্য :১) আমি আসতে চাইছিলাম, কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মের কারণে সম্ভব হয়নি।২) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিবাজি উৎসব নামে একটি কবিতা লিখেছিলেন। এই কবিতায় দেশের অখণ্ডতা মজবুত করার বার্তা দেওয়া হয়েছে। এই বার্তা ভোলা যাবে না, সবসময় মনে রাখতে হবে। এটাই তো রবীন্দ্রনাথের বার্তা। দেশে বৈচিত্র থাকবে। বিচারধারা থাকবে।৩) সন্ত্রাসবাদ যারা ছড়াচ্ছে, তাদের অনেকেই উচ্চশিক্ষিত এবং প্রশিক্ষিত। অন্যদিকে আবার এমন মানুষ আছেন, যাঁরা করোনাভাইরাস মহামারী থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গবেষণাকেন্দ্র এবং হাসপাতালে থাকছেন।৪) গুরুদেব যদি বিশ্বভারতীকে কেবলমাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে চাইতেন, তাহলে তিনি যে কোনও নামকরণ করতে পারবেন। কিন্তু উনি বিশ্বভারতী নাম দিয়েছেন। গুরুদেব ঠাকুরের জন্য বিশ্বভারতী শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। ভারতীয় সংস্কৃতিকে বিশ্বজনীন স্তরে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস ছিল বিশ্বভারতী।৫) ক্ষমতায় থেকে যেমন সংবেদনশীলতা বজায় রাখতে হবে, তেমনভাবেই প্রত্যেক ব্যক্তি বা মহিলা এবং প্রত্যেক বিশেষজ্ঞকেও সেই দায়িত্ব নিতে হবে। তোমাদের জ্ঞান শুধু আপনার নয়। তা সমাজ এবং দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ঐতিহ্য। তোমাদের জ্ঞান সমাজ এবং দেশকে গৌরাবান্বিত করবে। ৬) ইংরেজদের আমলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অবনতি হয়েছিল। সেই শৃ্ঙ্খল ভেঙে দিয়ে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্য জন্য পদক্ষেপ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলেছিলেন। বিশ্বভারতীতে সেই ধারা শুরু করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আধুনিক শিক্ষার জন্য বাংলার দিকে তাকিয়ে আছে দেশ। ৭) ২০৪৭ সালে ভারতে যখন স্বাধীনতার শততম বর্ষের উদযাপন করা হবে, তখন বিশ্বভারতীর ২৫ টি লক্ষ্য কী হবে, তা নিয়ে একটি 'ভিশন ডকুমেন্ট' তৈরি করা হোক।৮) তোমরা হয়ত সবসময় যা চাইবে, সেরকম ফলাফল পাবে না। কিন্তু সেজন্য জীবনে কখনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভয় পাবে না।