কালীঘাট মেট্রোয় যুগলের চুমু, আর সেটা নিয়েই বেশকিছুদিন ধরে গোটা কলকাতা জুড়ে, বিশেষত নেটপাড়ায় হইচই পড়ে যায়। ঘটনায় কেউ পক্ষে, কেউ আবার বিপক্ষে মুখ খোলেন। বিরসা দাশগুপ্ত, শ্রীলেখা মিত্ররা যেমন যুগলকে সমর্থন করেছিলেন, অন্যদিকে ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন মমতা শঙ্কর। কিংবদন্তি শিল্পী বলেছিলেন, ‘জন্তুরাও তো আমাদের থেকে অনেক ভালো। এই জন্যই তো এসব হচ্ছে আজকাল, এত রেপ হচ্ছে, আজকাল এতকিছু হচ্ছে।’ আর এবার কিংবদন্তি শিল্পীর বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করলেন অভিনেতা ঋদ্ধি সেন।
ফেসবুকের পাতায় যুগলের চুমুর ঘটনায় নিজের মতামত এবং মমতা শঙ্করের বক্তব্যের বিরোধিতা করে লম্বা একটা পোস্ট করেছেন ঋদ্ধি।
ঠিক কী লিখেছেন?
ঋদ্ধি লেখেন, ‘৭৮তম স্বাধীনতা দিবস পার করা এক দেশের মেট্রো স্টেশনে দুজন স্বাধীন নাগরিককে চুমু খেতে দেখে শ্রদ্ধেয় মমতা শঙ্করের মূল্যবোধে আঘাত লেগেছে। আজকাল এই মূল্যবোধের ব্যাপারটা খুব মজার, যে যার ব্যক্তিগত মূল্যবোধের ধারণাকে একটা জাতির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে ইচ্ছেমতো। কারুর মূল্যবোধের জমিতে যদি পঞ্চাশ তলা হাই রাইজের জায়গা এবং উচ্চতা জুড়ে স্থান পায় পুরাণ তাহলে সে গোটা দেশের জমির ইতিহাস এবং বর্তমানের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছে সেই মূল্যবোধ। আবার কেউ কেউ অন্যের মূল্যবোধের মন্ত্র শুনে বোমা মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে আস্ত একটা হাই রাইজ এবং তার ভেতরে বসবাস করা কিছু সহ নাগরিককে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মূল্যবোধের জায়গা থেকে নতুন শব্দ তৈরী করে চাপিয়ে দিচ্ছে ভাষাবিদ আর কবিদের ওপর আর তারা হাত পেতে সেই মূল্যবোধের বাতাসা খেয়ে একে অপরের সাথে হাত মিলিয়ে বলছে শুভনন্দন।’
এরপরই ঋদ্ধি রাজনৈতিক ও সামাজিক উদাহরণ টেনে বলেন, ‘বাম জমানায় চলচ্চিত্র উৎসবে প্রখ্যাত পরিচালক শকুরাভের টরাস ছবিতে লেনিনের জীবনের অন্তিম পর্বের চিত্রগ্রহণে তাকে অর্ধ নগ্ন, স্মৃতিভ্রংশ এবং মানবিক ভাবে স্পর্শগ্রাহ্য দেখানোর ফলাফল ছিল এক অংশের বামপন্থীদের মূল্যবোধে আঘাত লাগার কারণ, তারা চেয়েছিলেন ছবিটাকে চলচ্চিত্র উৎসব থেকে বহিষ্কার করতে, কারণ? মার্ক্স্, লেনিন বা হো চি মিনের বামপন্থার মূল্যবোধ আর হো চি মিন সরণির বামপন্থার মূল্যবোধ আলাদা। বাংলাদেশের মুষ্টিমেয় কিছু লোক তাঁদের মৌলবাদী মূল্যবোধ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে একটা গোটা দেশের স্বাধীনতার ওপর। মূল্যবোধের ঠেলায় কোনদিন হাসপাতাল ভেঙেও স্থাপন করা হবে মন্দির, মসজিদ।’
আর এরপরই ঋদ্ধি লেখেন, ‘ওই ঠিক একই ভাবে মমতা শঙ্কর তাঁর ব্যক্তিগত মূল্যবোধের ধারণা চাপিয়ে দিলেন গোটা বাঙালি জাতির ওপর, উনি হয়তো ভেবেছেন যে যার ঘাড়ে বাঙালি মূল্যবোধের ঝোলা ঝুলিয়ে ক্ষান্ত হয়ে সারা বছর তাঁকে বাঙালিয়ানা উপহার দেওয়ার সান্তাক্লজ বানিয়ে রেখেছে সেই রবি ঠাকুরও হয়তো প্রকাশ্যে চুমু খাওয়াকে অপসংস্কৃতি মনে করতেন, মমতা শঙ্করের কাছে হয়তো প্রাণ চায় চক্ষু না চায় গানটার অর্থ সেটাই, গানটা রবি বাবু যে অর্থে লিখেছেন উনি হয়তো উল্টো অর্থ বুঝেছেন, তাই বলে গান হোক বা সামগ্রিক বাঙালি সংস্কৃতি,ব্যক্তিগত উপলব্ধিকে সার্বিক অর্থ হিসেবে স্থাপন করা যায় কি ? যেখানে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার অধিকার দেওয়া বা কেড়ে নেওয়ার এক্তিয়ার আদালতেরই নেই সেখানে আর সংস্কৃতি কি করবে? তাও আবার চুমুর কোনো সংস্কৃতি হয় নাকি?’