অয়ন দাস
চাকরির ‘পোস্ট’-টা আগেই দেখেছিলাম। অপেক্ষা করছিলাম মহালয়ার সকালের জন্য। দেবীপক্ষের সূচনার দিনে মেসেজ করেছিলাম। সেখান থেকেই ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’-র সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি। তখনও অবশ্য একেবারে নিশ্চিতভাবে জানতাম না যে বাংলায় আসছে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-র পোর্টাল। ইংরেজিতে যেটা বলে ‘গাট ফিলিংস’, স্রেফ সেটা ছিল। একেবারে ঠিক ছিল সেদিনের ‘গাট ফিলিংস’-টা। আর তারপর একটা জিনিস বুঝতে পেরেছিলাম যে দেবীপক্ষের সূচনার সঙ্গে কতটা শুভ সময়ের শুরু হয়।
খাতায়কলমে আমার ‘শুভ সময়’ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর। সম্পাদক অর্ঘ্যপ্রসূন রায়চৌধুরীর পরে দ্বিতীয় সদস্য হিসেবে ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’-য় যোগ দিয়েছিলাম। তার চারদিন পরে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’-র। কোনও পোর্টাল চালু হওয়ার আগে যে অনেক কাজ থাকে, সেটা যে তেমন কিছু করেছিলাম, তা নয়। কিন্তু নিজের চোখে কোনও পোর্টালের ‘জন্ম’ হতে দেখলে যে আত্মিক টান তৈরি হয়ে যায়, সেটাই তৈরি হয়ে গিয়েছে ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’-র সঙ্গে।
যদিও ‘জন্ম’-র পরে ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’-র যাত্রাটা খুব একটা সহজ ছিল না। সেটা অবশ্য শুধু আমাদের জন্য নয়, সকলের জন্যই। ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’-র যাত্রা শুরু। তিন মাস যেতে না যেতেই কলকাতায় প্রথম কোভিড আক্রান্তের হদিশ মিলেছিল। মাসখানেক পরে ‘লকডাউন’।
‘স্যানিটাইজেশন’, ‘লকডাউন’-র মতো নিত্য-নতুন শব্দ শিখছিলাম। অসম্পূর্ণ এক অজানা দুনিয়ায় দাঁড়িয়েছিলাম সকলে। এরপর কী হবে, কারও ধারণা ছিল না। শুধু একটা বিষয়ই নিশ্চিত ছিল - প্রতিদিন দুপুর ৩ টে ৩০ মিনিটে কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করা হবে। ব্যস, ওইটুকুই! বাকিটা ছিল অনিশ্চিত। বাড়ছিল কোভিডের আক্রান্তের সংখ্যা, পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল আশঙ্কা। পরিস্থিতিটা আরও জটিল করে তুলেছিল ঘূর্ণিঝড় আমফান।
কিন্তু 'চ্যালেঞ্জ' ছাড়া কি আর মিডিয়ায় কাজ হয়? তাই 'চ্যালেঞ্জ'-টা সকলেই নিয়েছিলেন। আমফানের সময় বাড়িতে তিনদিন কারেন্ট না থাকায় একাহাতে খবর প্রকাশ করত অর্ঘ্য দা (সম্পাদক অর্ঘ্য প্রসূন রায়চৌধুরী)। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর সময় হাউ-হাউ করে কাঁদতে-কাঁদতে খবর করতে দেখেছি প্রিয়াঙ্কা দি'কে (প্রিয়াঙ্কা মুখোপাধ্যায়)। অভিষেক দা'কে (অভিষেক কোলে) একইসঙ্গে আইপিএলের লাইভ আর পরিসংখ্যানের কপি করতে দেখেছি।
যে পরিসংখ্যানের প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে গর্ব করে বলতে পারি যে বাংলায় নিয়মিতভাবে ‘স্ট্যাট’ কপি আমরাই শুরু করেছি প্রথমে। তাছাড়াও টিআরপি হোক বা মাল্টিব্যাগার শেয়ারের প্রতিবেদন হোক বা খেলার সমীকরণ (আইপিএলে কোন অঙ্কে কে প্লে-অফে উঠতে পারবে) হোক- বাংলায় ট্রেন্ডটা তৈরি করেছে ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’। তখনও অবশ্য আমাদের টিম মোটেও বড় ছিল না। কিন্তু সবাই হাতে হাত মিলিয়ে সেই ট্রেন্ডটা তৈরি করেছিলাম আমরা।
আর সেটা সম্ভব হয়েছিল অর্ঘ্য দা'র জন্যই। অর্ঘ্য দা'র নিজস্ব চিন্তাভাবনা তো ছিল। তাছাড়াও ‘ফ্রি-হ্যান্ড’ দিয়েছিল আমাদের। কোনও গণ্ডি বেঁধে দেয়নি। যেটা আমার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী হয়েছে। আসল দায়িত্ব ‘রাজনীতি ও দেশ-বিদেশের খবর’ থাকলেও চুটিয়ে খেলার খবর করেছি। মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্টের ‘কভার’ করতে গিয়েছি। আবার গঙ্গার তলায় মেট্রোর প্রথম ট্রায়াল রানে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছি একবাক্যেই। মাঠে গিয়ে আইএসএলের ম্যাচ কভার করেছি।
আর সেভাবেই ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’-র সঙ্গে যে আত্মিক যোগ এতটা হয়ে গিয়েছে, সেটার পিছনে অর্ঘ্যদা'র একটা বড় অবদান আছে। ক্রিকেটের নিরিখে যদি বলি, তাহলে প্রথম দিন থেকে গ্রেগ চ্যাপেল নন, আমার ‘কোচ’ ছিলেন রাহুল দ্রাবিড় বা রবি শাস্ত্রীর মতো কেউ। আর তাই ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’ যখন পাঁচ বছর পূর্ণ করল, তখন স্মৃতি, অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার অনেকটা পরিপূর্ণ হয়েছে। একেবারে জুনিয়র থেকে বিভিন্ন জিনিস শিখেছি, পেয়েছি দায়িত্ব। আর সেই সফরের পুরো বিষয়টা কীভাবে ব্যাখ্যা করব, কোনটা বলব, কোনটা বলব না, জানি না।
শুধু একটা জিনিসই বলতে চাই, হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা ‘নিজের’ হয়ে উঠেছে। একান্ত ‘নিজের’।