মিঁঞা কথাটি বাঙালি মুসলিমদের কাছে খারাপ কথা বলে গণ্য হয়। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে এমন কথা বেরিয়ে আসায় সমালোচনা হচ্ছে। অসমে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানাভাবে সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। এনআরসি কার্যকর করে সেখানকার কয়েক লাখ বাঙালিকে বিদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এবার অসমের বাংলাভাষী মুসলিমদের নিশানা করলেন অসমের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। ‘আগামী দশ বছর মিঁঞাদের ভোটের প্রয়োজন নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, কেন এই ভোট তিনি চান না এবং প্রয়োজন নেই সে কথাও উল্লেখ করেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী। এই মন্তব্য নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। এমনকী বিজেপির পক্ষে স্লোগান তুলে চিৎকার করলেও মিঁঞাদের ভোটের কোনও দরকার নেই বলে প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
ঠিক কী বলেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রীর? বিজেপি মানুষের জন্য কাজ করে যাবে। আর তাতেই ভোট পাবে বলে মনে করেন অসম মুখ্যমন্ত্রী। এই বিষয়ে হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, ‘মিঁঞারা আমার নামে, প্রধানমন্ত্রীর নামে, বিজেপির নামে জয়ধ্বনি দিতেই পারে। আমরা তাদের জন্য কাজ করব। কিন্তু নির্বাচন এলে আমিই তাদের অনুরোধ করব, তোমাদের ভোট চাই না। মিঁঞাদের ভোট তখন চাইব যখন তারা জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি অনুসরণ করবে, কম বয়সে ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেওয়া বন্ধ করবে এবং মৌলবাদী কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকবে। আমাদের সমর্থন না করলেও ক্ষতির কিছু নেই।’ এই মন্তব্য কি অহংকারের ফসল? উঠেছে প্রশ্ন।
এদিকে মিঁঞা কথাটি বাঙালি মুসলিমদের কাছে খারাপ কথা বলে গণ্য হয়। সেখানে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে এমন কথা বেরিয়ে আসায় সমালোচনা হচ্ছে। অসমে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানাভাবে সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এনআরসি কার্যকর করে সেখানকার কয়েক লাখ বাঙালিকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করে দাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকায় বেশিরভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। বিরোধীদের অভিযোগ, মেরুকরণের রাজনীতির লক্ষ্যে রাজ্যের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং জন্মকালে শিশুমৃত্যুর সমস্ত দায় এই সম্প্রদায়ের উপর চাপিয়েছে অসম সরকার।
অন্যদিকে অসমের মুখ্যমন্ত্রী এই মিঁঞাদের ভোট নিয়ে একের পর এক মন্তব্য করেন। তাঁর কথায়, ‘আমরা এদের ভোট চাইব ১০ বছর পর। এখন নয়। দুটোর বেশি সন্তান না করা, মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে হবে, বাল্যবিবাহকে উৎসাহ না দেওয়া এবং সুফিজিমকে গ্রহণ করে বাঁচতে শুরু করবে তখন তাঁদের কাছে গিয়ে আমি ভোট চাইব।’ জন্মকালে শিশুমৃত্যুর হার বেশি। তার কারণ বাল্যবিবাহ। আর এই সমস্যা সংখ্যালঘুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ৬ মাস আগে রাজ্য পুলিশ অভিযান চালিয়ে কম বয়সি মেয়েদের বিয়ে করার অভিযোগে দু’হাজারের বেশি লোককে গ্রেফতার করেছিল। হিমন্ত সরকারের অভিযোগ, বহু মাদ্রাসায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। হিমন্তের বক্তব্য, ‘এটা নয় যে সংখ্যালঘুরা পড়ার সুযোগ পায় না। আমরা আগামী দিনে সাতটি কলেজ খুলতে চলেছি সংখ্যালঘু এলাকায়।’