সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে শরীরের উপরে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বিভিন্ন গবেষণাপত্র উদ্ধৃত করে অর্থনৈতিক সমীক্ষায় এমনই জানানো হল। সাধারণ বাজেটের আগে শুক্রবার সংসদে যে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পেশ করা হয়েছে, তাতে জানানো হয়েছে, কাজের জন্য কেউ যদি নিজের ডেস্কে দীর্ঘক্ষণ সময় কাটান, তাহলে তা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হয়। কেউ যদি দিনে ১২ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় কাজ করেন, তাহলে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বেন। ধাক্কা লাগবে মানসিক স্বাস্থ্যে।
১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে কতটা প্রভাব পড়বে?
'স্যাপিয়েন ল্যাবস সেন্টার ফর হিউম্যান ব্রেন অ্যান্ড মাইন্ড'-র গবেষণাপত্র উল্লেখ করে অর্থনৈতিক সমীক্ষায় জানানো হয়েছে, যদি ডেস্কে কাজ করার সময়কে মানসিক সুস্বাস্থ্যের নিরিখে বিবেচনা করা যায়, তাহলে যাঁরা ১০ ঘণ্টা কাজ করছেন, তাঁদের থেকে ১২ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করা মানুষদের ১০০ পয়েন্ট কম হবে। অর্থাৎ সোজা ভাষায় বলতে গেলে যাঁরা ১২ ঘণ্টা বা তার বেশি ডেস্কে কাজ করছেন, তাঁদের তুলনায় ১০ ঘণ্টা বা তার কম কাজ করা মানুষদের মানসিক স্বাস্থ্য অনেক ভালো জায়গায় থাকবে।
৭০ ঘণ্টা-৯০ ঘণ্টা কাজের 'ফতোয়ার' মধ্যেই বার্তা
আর এমন একটা সময় অর্থনৈতিক সমীক্ষায় সেই বিষয়টির উপরে জোর দেওয়া হয়েছে, যখন সপ্তাহে কত ঘণ্টা কাজ করা উচিত, তা নিয়ে হইচই চলছে। মাসখানেক আগে লারসেন অ্য়ান্ড টুব্রোর চেয়ারম্যান এসএন সুব্রহ্মণ্যন বলেছিলেন, 'আমি হতাশ যে আমি আপনাদের দিয়ে রবিবারও কাজ করাতে পারি না। আমি যদি আপনাদের রবিবার কাজ করাতে পারতাম, তাহলে আমি আরও খুশি হতাম। কারণ আমি নিজে রবিবার কাজ করি।'
আরও পড়ুন:
লারসেন অ্য়ান্ড টুব্রোর চেয়ারম্যান আরও বলেছিলেন, 'বাড়িতে বসে কী করেন আপনারা? নিজের বউয়ের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারেন? স্বামীর দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারেন স্ত্রী?' সেইসঙ্গে তিনি বলেন, 'যদি আপনাকে বিশ্বের সেরা হতে হয়, তাহলে সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে।' সেই ‘ফতোয়া’ নিয়ে বিতর্ক হলেও পরবর্তীতে লারসেন অ্য়ান্ড টুব্রোর হিউম্যান রিসোর্স (HR) বিভাগের প্রধান সোনিকা মুরলীধরন দাবি করেছিলেন, তাঁর চেয়ারম্যানের মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। সুব্রহ্মণ্যন মোটেও সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজের কথা বলেননি।
আরও পড়ুন:
সেই বিতর্ক ও সাফাই-পর্বের আগে ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। তা নিয়ে এখনও হামেশাই কটাক্ষের মুখে পড়তে হয় ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতাকে। আর সেইসবের মধ্যেই অর্থনৈতিক সমীক্ষায় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে স্পষ্টভাবে জানানো হল যে শরীর ভালো রাখতে সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টার বেশি কাজ করা যাবে না।
আরও পড়ুন:
মুনাফার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন বৃদ্ধির সওয়াল
তারইমধ্যে কর্মচারীদের আরও বেশি টাকা প্রদানেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে অর্থনৈতিক সমীক্ষায়। ওই সমীক্ষায় জানানো হয়েছে, কর্পোরেট সংস্থার যে মুনাফা বাড়ছে, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো উচিত। যদি মুনাফা ও কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য থাকে, তাহলে সেটা দেশের অর্থনীতির জন্য খারাপ হয়। কারণ সেক্ষেত্রে চাহিদা বৃদ্ধি পায় না। বৃদ্ধি পায় না খরচ। সেই পরিস্থিতিতে দীর্ঘকালীন সময় স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য মুনাফা ও বেতনের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা উচিত বলে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে অর্থনৈতিক সমীক্ষায়।