দিল্লিতে সিবিআই ডিরেক্টরের সঙ্গে দেখা করলেন আরজি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার মা-বাবা। সিবিআই সদর দফতরে ডিরেক্টর প্রবীন সুদের সঙ্গে দেখা করে নির্যাতিতার বাবা বলেন, 'আমরা সিবিআই প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে আমাদের মেয়ে বিচার পাবে। আমরা কখনও সিবিআই তদন্তের দাবি করিনি। আদালত নিজে থেকেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল।' এরপর তিনি আরও বলেন, 'সাতমাস হয়ে গেল। আমাদের মেয়ে এখনও বিচার পেল না। আমরা বিচারের জন্যে সব সম্ভব দরজার কড়া নেড়েছি। আমরা এই লড়াই ছাড়ব না। সিবিআই এর আগে চার্জশিট জমা করেনি আদালতে। এর জেরে দুই অভিযুক্ত জামিনে মুক্তি পায়। এই আবহে আমি আদালতের সামনে আমার আবেদন রেখেছি নতুন করে।' (আরও পড়ুন: ফের কেঁপে উঠল বাংলা, ভোররাতের ভূমিকম্পে ভাঙল অনেকের 'গভীর ঘুম')
আরও পড়ুন: নয়া প্রধান পাচ্ছে SEBI, শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রকের মাথায় বসতে চলা তুহিন কে?
এদিকে নির্যাতিতার মা-বাবা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও দেখা করতে চাইছেন। নির্যাতিতার বাবা এই মর্মে ইতিমধ্যেই ইমেল পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, তিনি তাঁর অফিস থেকে একটি জবাব পেয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে দেখা করবেন কি না, সেই বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা হয়নি উল্লেখিত প্রতিবেদনে। এদিকে আনন্দবাজার পত্রিকার রিপোর্টে আবার দাবি করা হয়েছে, মোদীর দফতর থেকে কোনও জবাব পাননি নির্যাতিতার বাবা। তবে রাষ্ট্রপতির দফতর থেকে জবাব পেয়েছেন তিনি। তাতে বলা হয়েছে, সময়ের অভাবে তিনি দেখা করতে পারছেন না তাঁদের সঙ্গে। এদিকে নির্যাতিতার বাবা জানান, সুপ্রিম কোর্টে যিনি তাঁদের আইনজীবী করুণা নন্দীর সঙ্গে দেখা করবেন। শিয়ালদা আদালতে আমাদের যে লিগাল টিম আছে, তাঁরাও গিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে। (আরও পড়ুন: রহস্যজনক ভাবে হোটেল ঘরে মৃত্যু TMC বিধায়কের নিরাপত্তারক্ষী, সঙ্গে থাকা মহিলা আটক)
আরও পড়ুন: পুণেকাণ্ডে অভিযুক্ত গ্রেফতার, ধর্ষণের প্রায় ৬৬ ঘণ্টা পর পুলিশের জালে দত্তাত্রেয়
এদিকে আরজি কর কাণ্ডে ইতিমধ্যেই মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। সঞ্জয়ের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এরই সঙ্গে আরজি কর কাণ্ডে তথ্য়প্রমাণ লোপাটের মামলায় এবার সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট তৈরি করছে সিবিআই। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, দিল্লিতে সিবিআইয়ের সদর দফতরে এই মামলার দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট প্রস্তুত করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, এর আগে আরজি কর কাণ্ডে তথ্যপ্রমাণ লোপাট মামলায় হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। যদিও সময় মতো চার্জশিট জমা না করায় সেই মামলায় জামিন পেয়েছেন দু'জনেই।
তবে এবারের সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে কী কী তথ্যপ্রমাণ থাকবে? সিবিআই সূত্রকে উদ্ধৃত করে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, আরজি কর হাসপাতাল এবং টালা থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজের থেকে প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ খাকছে এই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে। এছাড়াও প্রায় ১৮০ জনকে জেরা করে যে তথ্য উঠে এসেছে, তার ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে এই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট। আগামী ৩ মার্চ শিয়ালদা অতিরিক্ত বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করা হবে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, এক সিবিআই কর্তা দাবি করেছেন, তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনা আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছিল। মৃত্যুর আসল কারণ ধামাচাপার চেষ্টা হয়েছিল। এই সংক্রান্ত নানা তথ্য মিলেছে। এই তদন্তের ফলে গুরুত্বপূর্ণ আদালতগ্রাহ্য তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। সেই সব তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এদিকে আরজি কর মামলায় সুপ্রিম কোর্টে এখনও পর্যন্ত সাতটি স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে সিবিআই। সেই সব মুখবন্ধ খামে জমা দেওয়া রিপোর্টের অনেক তথ্য দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে থাকতে চলেছে বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। এদিকে সিবিআই আধিকারিককে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, অভিজিৎ এবং সন্দীপ ছাড়াও আরজি কর কাণ্ডে তথ্যপ্রমাণ লোপাটে আরও বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর ভূমিকার কথা জানা গিয়েছে। সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে সেই সব তথ্যের উল্লেখ থাকবে বলে দাবি করা হয়েছে। যদিও অনেকের ক্ষেত্রে আদালতগ্রাহ্য তথ্যপ্রমাণ প্রতিষ্ঠা করায় কিছু জটিলতা আছে বলে দাবি করা হয়েছে সিবিআই সূত্রে। এই আবহে দিল্লির সদর দফতরে অভিজ্ঞ আইনজীবীদের সঙ্গে খুঁটিয়ে আলোচনা করে দ্বিতীয় সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট প্রস্তুত করা হচ্ছে।