আজকে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে বলতে উঠে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আক্রমণ শানালেন তৃণমূল কংগ্রেসের দমদমের সাংসদ সৌগত রায়। মণিপুর ইস্যুতে বিজেপি সরকারকেও তোপ দাগেন তিনি। পাশাপাশি বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়টিও তুলে ধরেন সৌগতবাবু। আজ তৃণমূল সাংসদ লৌকসভায় দাঁড়িয়ে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে আমার ব্যক্তিগত কোনও ক্রোধ নেই। তবে জুলিয়াস সিজারের ব্রুটাসের কথায়, আমি মোদীকে কম ভালোবাসি, এমন কিন্তু নয়। তবে আমি ভারতকে বেশি ভালোবাসি। যদি কেউ ভারতকে ভালোবাসে, তাহলে সে মোদীর বিরোধিতা করবে। কারণ তাঁর সরকার মিথ্যে প্রতিশ্রুতির সরকার। এবং ভুলভাল সব নীতি কার্যকর করেছে এই সরকার। তবে আমি ব্যক্তিগত আক্রমণে যেতে চাই না। আমি এটা জানতে চাই না যে মোদীজির শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটা। বা গুজরাট দাঙ্গা, বিবিসির তথ্যচিত্র নিয়েও কথা বলতে চাই না আমি। তবে এই সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে দিচ্ছে। তার ভুক্তভোগী পশ্চিমবঙ্গ।'
সৌগত রায় আরও বলেন, 'এই সরকার হৃদয়হীনদের সরকার। যেকোনও অজুহাতেই হোক তারা পরপর পশ্চিমবঙ্গে প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে। কিন্তু তাদের একটিও প্রতিনিধি দল মণিপুরে যায়নি। সেখানে আমাদের ভাই-বোনেরা মারা যাচ্ছে। তাও এই সরকারের তরফে তাদের প্রতি কোনও সহানুভূতি নেই। এবং সেই কারণেই আপনারা মণিপুরে যাননি। তবে সব বিরোধী দলগুলি কিন্তু সেখানি গিয়েছে।'
এরপর মণিপুর হিংসা নিয়ে সৌগত বলেন, 'মণিপুরে মৈতৈ এবং কুকিদের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল গত ৩ মে। এখনও সেটা জারি রয়েছে। এই গত ৫ অগস্ট মণিপুরে ৫ জন মারা যান। তাঁদের মধ্যে ২ জন মৈতৈ এবং ৩ জন কুকি ছিলেন। এখনও পর্যন্ত এই হিংসায় ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন সেই রাজ্যে। অন্তত পক্ষে ১০০ জন মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। প্রায় ৭০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। তাঁদের ৩৫০ উদ্বাস্তু শিবিরে রাখা হয়েছে। ইন্ডিয়া জোটের যে প্রতিনিধিদল মণিপুরে গিয়েছিল, তারা সেই সব শিবিরের কয়েকটিতে ঘুরে দেখেছে। গত ১৯ জুলাই মণিপুর হিংসার সবচেয়ে বিভীষিকাময় দৃশ্যটি সামনে এসেছিল। এক ভিডিো ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায়, দুই কুকি নারীকে নগ্ন করে ঘোরানো হচ্ছে এবং মৈতৈরা তাদের যৌন হেনস্থা করেছে। এই দেখে আমার প্রশ্ন, আমরা কি আদৌ কোনও সভ্য দেশে বসবাস করি? এই ঘটনা প্রায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে পুলিশ কোনও পদক্ষেপই করেনি।'
দমদমের তৃণমূল সাংসদ এরপর বলেন, 'মণিপুর হিংসা শুরুর ৮০ দিন পর এই নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি দাবি করেন, তাঁর মন নাকি ক্ষোভে, দুঃখে জর্জরিত। তবে তাও তিনি মণিপুরে যাননি। আর এখন সুপ্রিম কোর্ট বাধ্য হয়ে তিন সদস্যের এক কমিটি গড়েছে। কারণ কী? সরকার ব্যর্থ। আর তাই আজ মৈতৈরা কুকি গ্রামে হমলা চালাচ্ছে। আর কুকিরা স্বংক্রিয় বন্দুক ব্যবহার করে তাদের ওপর পালটা আক্রমণ চালাচ্ছে। এই অস্ত্রগুলি আসছে সীমান্ত পার করে। মাদক চাষেক টাকায় কেনা হচ্ছে এই অস্ত্র। বিজেপির বীরেন সিংয়ের সরকার সেই রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে ব্যর্থ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতেও এই সরকার ব্যর্থ।'