সাধারণত সুপ্রিম কোর্ট বরাবরই বিচারাধীন বন্দিদের অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট জামিনের ওপরেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তবে সব বিচারাধীন বন্দিদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয় বলেই উল্লেখ করেছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে দিয়েছে, একাধিক জঘন্য বা গুরুতর অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত কোনও দাগী অপরাধী এবং গ্যাংস্টারদের ক্ষেত্রে জামিন অধিকারের মধ্যে পড়ে না।
আরও পড়ুন: ‘বাবা-মায়ের যৌনতা’ নিয়ে মন্তব্যে দেশজুড়ে রোষের মুখে, সু্প্রিম কোর্টে রণবীর
ওড়িশার একটি মামলার শুনানিতে শীর্ষ আদালত বলেছে, ‘এই দেশে মামলা পরিচালনার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল গ্যাংস্টার এবং দাগী অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সাক্ষীদের আদালতে আনা। সাক্ষীরা তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে ভয় পান। বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং এনকে সিংয়ের বেঞ্চ আরও বলেছে, যেহেতু পুলিশ এখনও অপরাধ তদন্তের জন্য আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করছে না, তাই নিম্ন আদালতে সাক্ষীর জবানবন্দির অনুপস্থিতির ফলে মামলা বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে। অভিযুক্তরা জামিন পায় এবং এমনকী তাদের বেকসুরও খালাস করা হয়।
মামলার বয়ান অনুযায়ী, একাধিক খুনের অভিযোগ উঠেছিল ওড়িশার এক কুখ্যাত গ্যাংস্টার সুশান্ত কুমার ধলসামন্তের বিরুদ্ধে। সেই মামলায় জামিন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। তবে তার আইনজীবীর যুক্তি গ্রহণযোগ্য হয়নি শীর্ষ আদালতের কাছে। আইনজীবীর যুক্তি ছিল, ২০১৬ সালে দুটি খুন হয়েছিল। তাতে অভিযুক্ত প্রায় ৯ বছর ধরে জেলে ছিলেন। পালটা রাজ্য সরকারি আইনজীবী জানান, অভিযুক্তর বিরুদ্ধে ৪০টিরও বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। সাক্ষীরা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আদালতে উপস্থিত হতে ভয় পেয়েছেন। এরপরই বেঞ্চ এই বিষয়টিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করে জানায়, যদি কোনও রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টকে বলে যে সাক্ষীরা একজন গ্যাংস্টারের বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে সাক্ষ্য দিতে ভয় পাচ্ছেন, তাহলে এটি একটি উদ্বেগজনক বিষয়। আইনে নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য সাক্ষীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা প্রদান করতে পারছে না। এই বলে আদালত গ্যাংস্টারের জামিনের আবেদন খারিজ করে।
বেঞ্চ বলে যে অভিযুক্তের জেলে থাকাটাই ভালো হবে। অন্যান্য সকল কুখ্যাত অপরাধীর মতো তিনি জেল কর্মীদের কাছ থেকে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে এতগুলি মামলা থাকায় জামিনে মুক্তি দেওয়া সমাজের স্বার্থে হবে না। বেঞ্চ এই মামলায় দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করারও নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়াও সাক্ষীদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্যও রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে। আর ব্যর্থ হলে হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।