ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার মতো স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি প্রায়শই মানুষকে চিনি খাওয়া ছেড়ে দিতে বাধ্য করে। অনেকেই সকালের চায়ে এক চামচ চিনিও খান না। এটা ঠিক যে চিনি ছাড়তে সময় লাগে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণরূপে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আগে, আপনার জেনে রাখা উচিত যে এটি আপনার শরীরে কিছু পরিবর্তন আনতে পারে কিনা। বিশেষজ্ঞদের দাবি যে হঠাৎ করে চিনি খাওয়া ছাড়লে আপনার ঘুমের সমস্যা হতে পারে এবং আপনার শক্তির মাত্রাও প্রভাবিত হতে পারে।
হঠাৎ করে চিনি খাওয়া ছাড়লে কোন ৯ সমস্যার সম্ভাবনা থাকে
১. মেজাজের পরিবর্তন
চিনি হঠাৎ করে ছাড়লে ডোপামিন এবং সেরোটোনিনের মতো ভালো লাগার হরমোনের মাত্রা কমে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞের মতে, এটি অনেকের মেজাজের পরিবর্তন এবং বিরক্তির কারণ হতে পারে। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ, সাধারণভাবেই সেরোটোনিন এবং ডোপামিন উৎপাদনকে সমর্থন করে এমন খাবার যেমন বাদাম, বীজ, ডিম এবং দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আপনি এগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
২. ঘুমের সমস্যা
চিনি ত্যাগ করলে ঘুম ব্যাহত হতে পারে কারণ এটি আপনার কর্টিসলের মাত্রা বা স্ট্রেস হরমোনকে প্রভাবিত করে। এই পরিস্থিতিতে, ঘুমানোর আগে সব ধরণের স্ক্রিন থেকে দূরে থাকুন, তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস করুন এবং প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে এবং ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন। এটি আপনাকে নিয়মিত ঘুমাতে সাহায্য করবে।
৩. আপনার অন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে
প্রাথমিকভাবে, আপনি পেট ফাঁপা এবং বদহজমের মতো সমস্যা অনুভব করতে পারেন, কারণ এই সময়ে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটায় পরিবর্তন হয়, অর্থাৎ ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থেকে অন্ত্র-বান্ধব ব্যাকটেরিয়ায় স্থানান্তরিত হয়।
৪. আপনার মিষ্টির প্রতি আকাঙ্ক্ষা হতে পারে
আপনার চিনি ছাড়ার সিদ্ধান্ত আপনার শরীর সহজে মেনে নেবে না। আপনার অভ্যাস এবং অনুভূতির কারণে, শরীর মিষ্টি খাবার খাওয়ার ইচ্ছা আরও বাড়িয়ে দেয়। খাবারের পর মিষ্টি খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা হতে পারে। অতএব, হঠাৎ করে চিনি ত্যাগ করবেন না, অতিরিক্ত চিনির পরিবর্তে ফল এবং মধুর মতো প্রাকৃতিক মিষ্টি গখেতে থাকুন।
৫. ক্লান্ত বোধ করা
চিনি ছাড়ার পর আপনার শরীরের শক্তির মাত্রা কমে যেতে পারে, যা তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করে বলে জানা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শরীরে শক্তির মাত্রা বাড়ানোর জন্য, আপনাকে অবশ্যই একটি স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এতে ভালো মানের প্রোটিন, চর্বি এবং ফাইবার থাকা উচিত। এইভাবে আপনার শরীরে শক্তির প্রবাহ অক্ষত থাকে।
৬. মাথাব্যথা
মাথাব্যথা অনেক কারণেই হতে পারে। এমনকি ঠান্ডা কিছু খেলেও মাথাব্যথা হতে পারে। চিনি ত্যাগ করলেও মাথাব্যথা হয়। চিনি ছাড়ার পরপরই ডোপামিনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে এটি হতে পারে। আরাম পেতে, হাইড্রেটেড থাকুন এবং ভালোভাবে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
৭. ওজন পরিবর্তন
চিনি ছাড়ার পর আপনার ওজন ওঠানামা করতে পারে। বেশি চিনি গ্রহণ স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই চিনি বাদ দিলে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু আপনার খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবারযুক্ত সুষম খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
৮. ত্বকের সমস্যা
আপনি হঠাৎ করে চিনি খাওয়া বন্ধ করে দিলে আপনার শরীর নিজেকে পরিষ্কার করতে শুরু করে এবং এই প্রক্রিয়াটি কখনও কখনও আপনার ত্বকে দেখা দিতে পারে। এটি যদিও স্বাভাবিক এবং সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কয়েক সপ্তাহ পরে ত্বক পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে।
৯. মনযোগ ব্যাহত
যেহেতু আপনার মস্তিষ্ক সাধারণত জ্বালানী হিসাবে চিনি (গ্লুকোজ) ব্যবহার করে, তাই হঠাৎ চিনি বন্ধ করলে ক্লান্ত, ভুলে যাওয়া বা স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে না পারার মতো অনুভূতি পেতে পারেন।
এই বিষয়গুলো মনে রাখবেন
- চিনি সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করার পরিবর্তে, ধীরে ধীরে এটি বাদ দিন। এটি আপনার শরীরকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দেবে।
- আপনি গুড়, মধু, খেজুর অথবা ফল খেতে পারেন। এতে স্বাদ অক্ষুণ্ণ থাকবে এবং কোনও ক্ষতিও হবে না।
- বেশি করে জল খান। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।