ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে সাময়িক স্বস্তি দিলেন সেদেশের এক ফেডারেল বিচারক। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যাতে বিদেশি পড়ুয়াদের নাম নথিভুক্ত করতে না পারে, সেই বন্দোবস্তই করতে চেয়েছিল প্রশাসন। আপাতত তাতে সাময়িক ছাড় পাওয়া গেল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারের দাবি হল, হার্ভার্ডে যাঁরা অন্য়ান্য দেশ থেকে পড়াশোনা করতে আসছেন, সেই বিদেশি পড়ুয়াদের সম্পর্কে সমস্ত তথ্য এবং ক্য়াম্পাসে তাঁরা কী কী করছেন, সেইসব সরকারের হাতে তুলে দিতে হবে। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ এই দাবি মানতে নারাজ। এই প্রেক্ষাপটে আদালতে আইভি লিগ স্কুলের এই ছোট্ট জয় কম তাৎপর্যপূর্ণ নয় বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্য়ান্ড সিকিউরিটির নির্দেশ অনুসারে, বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের নাম নথিভুক্ত করার বিষয়ে হার্ভার্ডের ক্ষমতা বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬,৮০০ পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এবং যেকোনও মুহূর্তে তাঁদের ভিসা বাতিল হয়ে যাবে। এর ফলে যে মারাত্মক হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও ইতিমধ্য়েই তা নিয়ে প্রশাসনকে সতর্ক করেছে।
ট্রাম্প সরকারের এহেন আচরণের তীব্র বিরোধিতা করেছেন হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্য়ালান গার্বার। তিনি মনে করেন, 'এর ফলে হাজার হাজার পড়ুয়া ও গবেষকের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হয়ে যাবে।'
এই প্রেক্ষাপটে সরকারি নিষেধাজ্ঞার উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন ফেডারেল বিচারক অ্য়ালিসন বারোঘস। শোনা যাচ্ছে, আগামী দিনে এই স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে। শীঘ্রই এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানি করা হবে।
উলটো দিকে ট্রাম্প প্রশাসনের বক্তব্য হল, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি পড়ুয়াদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সেখানে ইহুদিবিরোধী মতবাদ গড়ে উঠছে। এবং বিদেশি পড়ুয়াদের একটি অংশ হামাসের হয়ে সওয়াল করছে। এর ফলে ইহুদি পড়ুয়ারা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে ট্রাম্পের সরকার।
এর জবাবে আদালতে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকার তাদের প্রাপ্য আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ করে দিয়েছে। যার ফলে সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে এবং তাতে চলতি শিক্ষাবর্ষে এক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে আদালতের স্থগিতাদেশ আপাতত বিদেশি পড়ুয়াদের কিছুটা স্বস্তি দিলেও শেষমেশ কী হবে, সেটা এখনও বোঝা সম্ভব নয়। কারণ, এই মামলা কতদিন চলবে, কবে তার চূড়ান্ত রায় আসবে, রায়ে কোন পক্ষের স্বার্থরক্ষা করবে, সেসব এখন বোঝা যাবে না।
যদি সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষমেশ কার্যকর হয়, তাহলে হার্ভার্ডের পাঠরত হাজার হাজার পড়ুয়া ও গবেষক তাঁদের আমেরিকায় থাকার অধিকার হারাবেন। আগামী দিনেও বিদেশি পড়ুয়াদের নাম নথিভুক্ত করতে বা ভিসায় আর্থিক সাহায্য প্রদান করতে পারবে না বিশ্ববিদ্য়ালয় কর্তৃপক্ষ।
এই প্রেক্ষাপটে হংকং ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্য়ান্ড টেকনোলজি হার্ভার্ডের বিদেশি পড়ুয়াদের আহ্বান জানাতে শুরু করে দিয়েছে। তারা চাইছে, পড়ুয়ারা ট্রান্সফার নিয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পড়াশোনা করতে আসুন!