কাশ্মীরি শালওয়ালাদের সঙ্গে বাংলার মানুষের সম্পর্ক বহু পুরোনো। রাজ্যের নানা প্রান্তেই বছরের নির্দিষ্ট সময়ে কাশ্মীর থেকে শালের অপূর্ব সব সম্ভার নিয়ে আসেন শালওয়ালারা। বাঙালি খদ্দেররা জমিয়ে সেসব কেনেন।
কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। কাশ্মীরি জঙ্গি ধরা পড়েছে ক্যানিংয়ে। পড়শি বাংলাদেশে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ। এই অবস্থায় কাশ্মীরি শালওয়ালাদের নিয়ে আরও সচেতন ও সতর্ক থাকতে চাইছে প্রশাসন।
প্রশাসনের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। প্রথমত, কাশ্মীরি শালওয়ালাদের ছদ্মবেশে যাতে জঙ্গিরা রাজ্যে ঢুকতে না পারে। এবং দ্বিতীয়ত, কাশ্মীরি শালওয়ালাদের সঙ্গে বাঙালির এত বছরের সুসম্পর্ক যেন কোনও মতেই নষ্ট না হয় এবং কাশ্মীরি শাল-সহ অন্যান্য পণ্যের বিকিকিনিতে যেন কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়।
টিভি নাইন বাংলা-এ এই বিষয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, সেই অনুসারে - কাশ্মীরি শালওয়ালাদের নিয়ে আরও সচেতন থাকতে বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ পুরসভা ও বনগাঁ থানা।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশঙ্কা, কাশ্মীরি শালওয়ালাদের ছদ্মবেশে যেকোনও সময় জঙ্গিরা এলাকায় ঢুকে পড়তে পারে। তাই এলাকায় আসা কাশ্মীরি শালওয়ালাদের সচিত্র পরিচয়পত্র যাচাই করার পাশাপাশি, তাঁদর উপর বিশেষ নজরও রাখা হচ্ছে।
এর পাশাপাশি, যাঁরা সেই শালওয়ালাদের কাছ থেকে শাল কিনছেন, তাঁদের উপরও নজরদারি রাখা হচ্ছে। কিন্তু, এমনটা কেন করা হচ্ছে? কারণ, এই কাশ্মীরি শালওয়ালাদের কাছ থেকে যাঁরা শাল কেনেন, সেই তালিকায় বাংলাদেশিরাও রয়েছেন।
তথ্য বলছে, বহু বছর ধরেই বাংলাদেশি নাগরিকরা মাল্টিভিসা নিয়ে এই সময়টায় এলাকায় ঢোকেন। তাঁরা আসেন মূলত কাশ্মিরী শালওয়ালাদের কাছ থেকে শাল কিনতে। কেনাকাটা হয়ে গেলে তাঁরা ফিরেও যান।
কিন্তু, প্রশাসনের আশঙ্কা, এবার কোনও জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদীও সাধারণ বাংলাদেশি ক্রেতার ছদ্মবেশে কাশ্মীরি শালওয়ালাদের কাছ থেকে শাল কেনার অছিলায় এলাকায় ঢুকে পড়তে পারে।
এই ধরনের কোনও ঘটনা যাতে না ঘটে, তা নিশ্চিত করতেই কাশ্মীরি শালওয়ালাদের পাশাপাশি তাঁদের কাছ থেকে শাল কিনতে আসা মানুষজনের উপরেও কড়া নজর রাখা হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে কাশ্মীরি শালওয়ালাদেরও সহযোগিতা দরকার বলে মনে করছে বনগাঁ পুর কর্তৃপক্ষ। তাদের বক্তব্য, এত দিন কাশ্মীরি শালওয়ালাদের সঙ্গে এলাকাবাসীর যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও আত্মীয়তা তৈরি হয়েছে, তা অটুট রেখেই যেকোনও নাশকতার সম্ভাবনা উৎখাত করতে হবে।
প্রশাসনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় শাল বিক্রি করতে আসা কাশ্মীরি শালওয়ালারাও। সংবাদমাধ্যমকে তাঁরা জানিয়েছেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন আগেও হত। এটা নতুন কিছু নয়। তবে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা যদি আরও কঠোর করা হয়, তাতে সকলেরই মঙ্গল। এবং দেশের নিরাপত্তার জন্য এটা জরুরিও বটে।