স্ত্রীর বাপেরবাড়ির সদস্যরা স্বামীর বাড়িতে আসতেই পারেন। থাকতেও পারেন। কিন্তু স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর বাড়িতে স্ত্রীর বাপেরবাড়ির লোকজন এবং বন্ধুবান্ধব দীর্ঘদিন থাকলে সেটা বৈবাহিক নিষ্ঠুরতার সমান। এক মামলার শুনানিতে আজ, সোমবার এমনই পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাইকোর্টের। এই নিষ্ঠুরতার তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই এক মামলায় বিবাহবিচ্ছেদের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রীর পরিবার এবং তাঁদের বন্ধুবান্ধবরা স্বামীর বাড়িতে থাকছিলেন। তাতে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল স্বামীর। এই অভিযোগে বিবাহবিচ্ছেদ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কোলাঘাটের বাসিন্দা এক ব্যক্তি।
স্বামীর অনিচ্ছার পরও স্ত্রীর পরিবারের লোকজন বা বন্ধুরা তাঁর বাড়িতে থাকছিল বলে অভিযোগ। এটাকেই অত্যাচারের সমান বলে উল্লেখ করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের পক্ষ থেকে। এমনকী এই ইস্যুতে এক ব্যক্তির বিবাহবিচ্ছেদের আর্জিও মঞ্জুর করেছে উচ্চ ন্যায়ালয়। ২০০৮ সালে স্বামীর কোলাঘাটের বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন স্ত্রী। কিন্তু সেই বাড়িতে থাকতে শুরু করেছিলেন স্ত্রীর বাপেরবাড়ির এক সদস্য এবং এক বন্ধু। কোলাঘাটের বাড়ি ছেড়ে ২০০৮ সালে নারকেলডাঙা এবং ২০১৬ সালে উত্তরপাড়ায় থাকতে শুরু করেন স্ত্রী। কিন্তু সেখানে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুকে থাকতে দেননি। বরং তাঁদের রেখে দেন স্বামীর কোলাঘাটের বাড়িতেই। আর এতেই তিতিবিরক্ত হয়ে উঠছিলেন স্বামী।
আরও পড়ুন: ধনেখালিকাণ্ডে ফাঁসির সাজার নির্দেশ, বাবা–মা–বোনকে নির্মম খুন করে মিলল মৃত্যুদণ্ড
এই তিতিবিরক্তি থেকে স্বামী মামলা দায়ের করেন কলকাতা হাইকোর্টে। আর বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ও বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ সব শোনার পর তাঁদের পর্যবেক্ষণ, স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় তাঁর বাড়িতে স্ত্রীর পরিচিত লোকজন থাকা বৈবাহিক নিষ্ঠুরতার সামিল। স্বামী–স্ত্রী পৃথকভাবে থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁর পরিজনরা শ্বশুরবাড়িতে থাকবেন? প্রশ্ন তোলে কলকাতা হাইকোর্ট। মামলাকারী ব্যক্তির অভিযোগ ছিল, স্ত্রী তাঁর সঙ্গে স্বাভাবিক সাংসারিক সম্পর্ক রাখতে এবং সন্তানধারণ করতে ইচ্ছুক নন। ২০০৫ সালে নবদ্বীপে বিয়ে হয় ওই ব্যক্তির। আর বিয়ের তিন বছরের মধ্যেই বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন স্বামী।
শিয়ালদায় স্ত্রীর অফিস। তাই তিনি কোলাঘাট ত্যাগ করে নারকেলডাঙায় চলে যান। কলকাতা হাইকোর্ট আজ জানিয়েছে, স্বামীর বাড়িতে তাঁর অনিচ্ছা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তাঁরই পরিচিত লোকেদের থাকা অবশ্যই নিষ্ঠুরতার সমান। এই অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই ব্যক্তির স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হয়। ২০০৮ সালে স্ত্রী কাজের অজুহাত দেখিয়ে নারকেলডাঙায় একটি বাড়ি ভাড়া করে একলা থাকা শুরু করেন। অথচ কোলাঘাটের বাড়ি থেকে স্ত্রী তাঁর পরিজনদের পাঠিয়ে দেন। সেই থেকেই বিরক্তির সূত্রপাত স্বামীর।