প্রশ্ন: দ্বাদশ শ্রেণির পরে পড়ুয়ারা কীরকম কেরিয়ার বেছে নিতে পারেন?
উত্তর: উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অনেকেই তথাকথিত ‘সুুরক্ষিত’ কেরিয়ারের পথে হাঁটেন। কিন্তু আজকের দুনিয়ায় নিজের স্বপ্নেরও দাম মেলে। আর তাই আমি পরামর্শ দেব যে ভেবেচিন্তে ভবিষ্যতের রূপরেখা নির্ধারণ করা উচিত। সন্তানরা কোন কোন বিষয়ের প্রতি আগ্রহী, সেটা খেয়াল করা উচিত অভিভাবকদের। পাঠ্যবইয়ের থেকে আপনার সন্তান কি ক্রিকেটের স্ট্র্যাটেজি বেশি খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করে অথবা তথ্যমূলক ভ্লগ তৈরি করে? তাহলে স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট বা মিডিয়ার মতো বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে আপনার সন্তান। ভবিষ্যতের রূপরেখা নির্ধারণের ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যে কোন বিষয়ের প্রতি বেশি কৌতূহল আছে। ভয় সরিয়ে রেখে সেটা নির্ধারণ করতে হবে।
প্রশ্ন: দ্বাদশ শ্রেণির পরে কোন বিষয় নিয়ে পড়ব? সেটা ঠিক করবেন কীভাবে?
উত্তর: এক্ষেত্রে আমরা যে বড় ভুলটা করে ফেলি, সেটা হল যে নম্বর এবং ভালোবাসার বিষয়ের মধ্যে একটা সংঘাত তৈরি করে দিই। এটা সংঘাতের বিষয় নয়। যে পড়ুয়া তর্ক-বিতর্কের ক্ষেত্রে ভালো, সে হয়তো আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে। আবার কেউ যদি মানচিত্র আঁকতে ভালোবাসে বা মানচিত্রের প্রতি টান থাকে, তাহলে সে পড়াশোনা করতে পারে ভূগোল বা নগর পরিকল্পনার মতো বিষয় নিয়ে। সেভাবেই নিজের পছন্দের বিষয়টা নির্ধারণ করে নিতে পারে পড়ুয়ারা। আর তাতে সাহায্য করতে পারেন অভিভাবক-শিক্ষকরা।
প্রশ্ন: স্নাতক স্তরের পড়াশোনার পাশাপাশি কি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে?
উত্তর: অবশ্যই। তবে সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে চলতে হবে। তৈরি করে নিতে হবে ছক। কেউ হয়তো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য ৬০-৭০ শতাংশ বরাদ্দ রাখল। আর বাকি সময়টা শুধু স্নাতক স্তরের পড়াশোনার জন্য বরাদ্দ রাখতে পারে। পাঠ্যক্রমে যে যে বিষয় আছে, সেগুলি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়, তাহলে সেখান মক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যেতে পারে। স্নাতক স্তরের পড়াশোনা এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতিকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
সার্বিকভাবে মানসিক প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেউ যদি সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষা দিতে চায়, তাহলে তাকে রোজকার সংবাদের বিষয়ে অবহিত থাকতে হবে। আর সেক্ষেত্রে পড়ুয়ার মতো সংবাদ না পড়ে একজন নীতিনির্ধারকের মতো পড়া উচিত। আবার এমবিএয়ের প্রবেশিকার জন্য টাইমড পাজলের মতো ডিসিশন-মেকিং সংক্রান্ত প্রশ্নের অনুশীলন করা দরকার আছে।
প্রশ্ন: স্নাতক স্তরের পড়াশোনার সময় কি ইন্টার্নশিপ গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে বাস্তব দুনিয়ার অভিজ্ঞতার উপরে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। শুধুমাত্র সিভিতে রাখার জন্য নয়, আসল দুনিয়ায় অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য ইন্টার্নশিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইন্টার্নশিপ মানে নেহাতই একটি সার্টিফিকেটের বিষয় নেই। ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে অনেক জিনিস শেখা যায়, যা পরবর্তীতে কাজে লাগবে। আর আজকের দুনিয়ায় চাকরিতে নেওয়ার সময় প্রশ্ন করা হয় না যে ‘কী নিয়ে পড়েছেন?’ বরং জানতে চাওয়া হয় যে ‘কী করতে পারেন?’
প্রশ্ন: পড়ুয়াদের উপরে চাপ তৈরি না করে কেরিয়ার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষ হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে পারে?
উত্তর: সেটার উত্তর লুকিয়ে আছে সহানুভূতিশীলতার মধ্যে। স্কুল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ওয়ার্কশপের আয়োজন করতে পারে। আর তাতে অংশগ্রহণ করার জন্য পড়ুয়াদের উৎসাহ জোগাতে হবে। অথবা পড়ুয়াদের উৎসাহ আছে, এমন বিষয়ের ওয়ার্কশপে যোগ দিতে অনুপ্রেরণা জোগানো উচিত অভিভাবক বা স্কুল কর্তৃপক্ষের। সেরকমভাবেই পড়ুয়াদের পছন্দ এবং ভালোবাসার ক্ষেত্রটা বেছে নিতে হবে।
এক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে বাবা-মায়ের স্বপ্নের সঙ্গে পড়ুয়ার প্রতিভার মধ্যে বিভাজন আছে। সেই বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে, যাতে পড়ুয়াদের অহেতুক মানসিক চাপ তৈরি না হয়। একটা সহজ মন্ত্র বলতে চাই, ‘তুমি কত শতাংশ নম্বর পেয়েছো, সেটার পরিবর্তে প্রশ্ন করা উচিত যে কোন দিকে তোমার আগ্রহ আছে। যারা নির্ভীকভাবে ভাবতে পারে, ভবিষ্যৎ তাদেরই হয়।’