কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রটি ১৯৬৭ সালের প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতার দক্ষিণাঞ্চের সাতটি বিধানসভা নিয়ে এই কেন্দ্র গঠিত। কসবা, বেহালা পূর্ব, বেহালা পশ্চিম, কলকাতা বন্দর, ভবানীপুর, রাসবিহারী এবং বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে কলকাতা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রটি গঠিত। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের হিসাবে এই কেন্দ্রের মোট ভোটদাতা ছিলেন ১৬ লক্ষ ৮৫ হাজার ২৯৬ জন। গত লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ মালা রায় জয়ী হন।
এবারও তৃণমূলের প্রার্থী মালা রায়। ধারে ও ভারে তিনি অনেকটাই এগিয়ে। যদিও বিপক্ষে বেশি হেভিওয়েট প্রার্থীরা আছে। বিজেপির হয়ে আছেন রায়গঞ্জের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় সরকারে রাষ্ট্রমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। তাঁকে এবার এখান থেকে টিকিট দিয়েছে পার্টি। অন্যদিকে আছেন সিপিএমের সায়রা শাহ হালিম। ফুয়াদ হালিমের স্ত্রী তথা নাসিরুদ্দিন শাহের আত্মীয়া সায়রার হাত ধরে এবার দক্ষিণ কলকাতায় জয়ের স্বপ্ন দেখছে দল। তাঁর প্রচারে ভালো লোকও হচ্ছে তবে সংগঠন কতটা শক্তিশালী, সেই নিয়ে প্রশ্ন আছেই। পয়লা জুন সপ্তম দফায় ভোট এখানে।
বিভিন্ন সময়ে হেভি ওয়েট প্রার্থীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এই কেন্দ্রে। 1967 সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলগুলি এক নজরে দেখে নেওয়া যাক৷ ১৯৬৭ সালে এই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন চট্টগ্রাম বিপ্লবী বাহিনীর অন্যতম সদস্য গণেশ ঘোষ। জাতীয় কংগ্রেসের বি.বি. ঘোষকে পরাজিত করে তিনি জয়ী হন।
১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনে গনেশ ঘোষকে পরাজিত করে জাতীয় কংগ্রেসের প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। আবার ১৯৭৭ লোকসভা নির্বাচনে দেখা যায় প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিকে পরাজিত করে ভারতীয় লোক দলের দিলীপ চক্রবর্তী ১৮ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হোন। ১৯৮০ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি যায় সিপিআইএমের দখলে। কংগ্রেসের ভোলানাথ সেনকে হারিয়ে সত্যসাধন চক্রবর্তী এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ফের সত্যসাধন চক্রবর্তীকে হারিয়ে জাতীয় কংগ্রেসের ভোলানাথ সেন এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। প্রত্যেকটি নির্বাচনে একে অপরকে টক্কর দিতে দেখা যায় রাজনৈতিক দলগুলিকে। ১৯৮৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিপ্লব দাশগুপ্ত সাংসদ নির্বাচিত হন।
১৯৯১ সালে জাতীয় কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জয়ী হন। এর পরবর্তীতে ২০০৯ সাল পর্যন্ত টানা ছ’টি লোকসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। সিপিআইএমের হেভিওয়েট প্রার্থী রবীন দেব ২০০৪ এবং ২০০৯ সালে পরাজিত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। ২০১১ সালের উপনির্বাচনের সুব্রত বক্সি এই কেন্দ্রটি থেকে জয়যুক্ত হন সিপিএম প্রার্থী ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির তথাগত রায়কে হারিয়ে এই কেন্দ্রটি থেকে জয়লাভ করেন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে নিরিখে মালা রায় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই কেন্দ্রে ৪৭ শতাংশ ভোট পায় এবং বিজেপির চন্দ্র কুমার বোসকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন। শেষ পাঁচটি লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রের ভোটদানের হার ছিল ৬৬ থেকে ৭০ শতাংশের কাছাকাছি। প্রসঙ্গত এই কেন্দ্রটি থেকে জয়লাভ করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু-দু’বার রেলমন্ত্রী হয়েছিলেন।
২০২১ সালের লোক বিধানসভা নির্বাচনে কসবা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে আহমেদ জাবেদ খান তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে জয়ী হন ২৮ শতাংশের এর বেশি ভোটের ব্যবধানে। বেহালা পূর্ব কেন্দ্রটি থেকে রত্না চ্যাটার্জি তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে জয়ী হন। বেহালা পশ্চিম কেন্দ্র থেকে পার্থ চ্যাটার্জি পঞ্চাশ হাজারের বেশি ভোটের মার্জিনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করেন। কলকাতা বন্দর কেন্দ্রটি থেকে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৬৮ হাজারের বেশি ভোটের মার্জিনে পরাজিত করেন। ভবানীপুর লোকসভা কেন্দ্রে শোভন চট্টোপাধ্যায় বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে প্রায় ২৩ শতাংশ ভোটে জয়যুক্ত হন। রাসবিহারী এবং বালিগঞ্জ কেন্দ্র দু’টিতে যথাক্রমে দেবাশীষ কুমার এবং সুব্রত মুখার্জি জয়ী হন। সুব্রত মুখার্জি ৫০ শতাংশের বেশি ভোটের মার্জিনে জয়ী হয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হন এই বালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে। উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বর্তমানে ভবানীপুর বিধানসভার বিধায়ক।