অমিতাভ বচ্চন এবং ধর্মেন্দ্র অভিনীত 'শোলে' ছবিতে সুরমা ভোপালীর চরিত্রটির কথা মনে আছে? যে চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ জাফরি ওরফে জগদীপ। সেই চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের কাছ থেকে অনেক প্রশংসা পেয়েছিলেন তিনি। একজন কৌতুকাভিনেতা হওয়ার পাশাপাশি, তিনি বিভিন্ন ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় পালন করেছেন। তাঁর এই অসাধারণ অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত এই অভিনেতার জীবনে এমন একটা সময় এসেছিল যখন দিলীপ কুমার নিজেই তাঁকে তাঁর গাড়িতে করে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসতেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু জগদীপকে তাঁর পছন্দের একটি লাঠি দিয়েছিলেন।
জগদীপের ছেলে অভিনেতা জাভেদ জাফরি, সাংবাদিক প্যাটসি অ্যানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, তাঁর বাবার কথা স্মরণ করেছেন। তাঁর বাবার জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক উপাখ্যান শেয়ার করেছেন। বাবার জীবনের সংগ্রামের গল্প বর্ণনা করার পর, অভিনেতা বলেন, ‘ফুটপাথ ছবিতে তিনি দিলীপ কুমারের শৈশবের ভূমিকায় অভিনয় করেন। হঠাৎ করেই কিছু মুহূর্তের শট নেওয়া হয়েছিল তখন বাবার উপর। সেই দৃশ্যে তাঁকে কাঁদতে হয়েছিল। আমার বাবা গ্লিসারিন না লাগিয়ে সেই কান্নার দৃশ্যটি অভিনয় করেন। তিনি সেই দৃশ্যটি এত ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলেন যে দিলীপ কুমারও তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। দিলীপ সাহেব মুগ্ধ হয়ে আমার বাবাকে সেসময় একশো টাকা পুরস্কার দিয়েছিলেন।’


অভিনেতা আরও বলেন, ‘আমার বাবা এবং দাদী (ঠাকুমা) ততক্ষণে মাহিমে একটি ছোট ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। সেদিনের শুটিং শেষ হওয়ার পর, দিলীপ সাহেব আমার বাবাকে তাঁর গাড়িতে করে মাহিমে নামিয়ে দিতে আসেন। দিলীপ সাহেব তাঁকে একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে নামিয়ে দেন। তিনি যখন পেট্রোল পাম্পে গাড়ি থামান, তখন কিছু লোক তাঁর অটোগ্রাফ নিতে সেখানে হাজির হন। দিলীপ সাহেব তাঁদের সেদিনের সেই ছোট্ট শিশু অভিনেতারও অটোগ্রাফ নিতে বলেন। বলেন, ভবিষ্যতে সে একজন বড় তারকা হবে। সেই দিনই আমার বাবা তাঁর প্রথম অটোগ্রাফে স্বাক্ষর করেছিলেন।’
অভিনেতা আরও বলেন, ‘আমার বাবা মনে করতে পারেন নি যে কে তাকে জগদীপ নাম দিয়েছিল। কিন্তু তিনি ওই নামটি পছন্দ করতেন। তার আসল নাম ছিল সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ জাফরি। আর সিনেমার জগতের লোকেরা তাঁকে মুন্না বলে ডাকত। নেহেরুজি তাকে হাম পাঁচি এক দাল কে- ছবির জন্য নিজের প্রিয় লাঠিটিই উপহার হিসাবে দেন। নেহেরুজি সেই ছবির সমস্ত শিশু অভিনেতাদের নাস্তার (প্রাতঃরাশ) জন্য তাঁর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমার বাবার বয়স তখন ১৫ বছর। নেহেরুজি সবাইকে উপহার দিতেন। কিন্তু যখন আমার বাবার পালা, উপহার শেষ হয়ে গেল। তারপর নেহেরুজি নিজের লাঠি তুলে আমার বাবাকে বললেন, আমার এই লাঠিটা আমার খুব পছন্দ। কিন্তু আজ থেকে এটা তোমার। আমার বাবা সবসময় সেই লাঠিটি নিরাপদে যত্ন করে রেখেছিলেন।’