কদিন আগেই শহর কলকাতায় ঘটা একটি ঘটনা নিয়ে রীতিমতো উত্তাল হয় চায়ের দোকান, সোশ্যাল মিডিয়া, পাড়ার ঠেক। আর তা হল কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে এক প্রেমিক যুগলের চুম্বন। পক্ষে-বিপক্ষে নানারকম মন্তব্য পড়েছে। আর সেই নিয়ে বর্ষীয়ান অভিনেত্রী মমতা শঙ্করের করা একটি মন্তব্য ঘিরে রীতিমতো হইচই। শাড়ি-বিতর্কের পর তিনি ফের একবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। মমতা শঙ্কর সেই সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি এর বিরুদ্ধে। জন্তুরাও তো আমাদের থেকে অনেক ভালো। এরপরে সমস্ত কিছু করার সাহস হয়ে যাবে। স্থান-কাল-পাত্র বলে কোনও ব্যপার থাকবে না!’
ঠিক এই সাক্ষাৎকার থেকেই ‘জন্তুরাও আমাদের থেকে ভালো’ কেড়ে নিয়েছে সমস্ত ফোকাস। বহু তারকাও মুখ খুলেছেন মমতা শঙ্করের বিরুদ্ধে। ঠিক কী বলতে চেয়েছিলেন তিনি? কোনো ভাবে কি ভুল অর্থ করা হচ্ছে, তাঁর বলা কথার? হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার তরফ থেকে ফোন করা হলে মমতা স্পষ্ট করলেন, তাঁরও চোখে পড়েছে এই কাঁটাছেড়া। তবে তিনি নিজের বক্তব্য অনড়। কারণ যা বলেছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে বলেছেন। ভারতীয় সংস্কৃতির কথা ভেবে বলেছেন।
মমতা শঙ্কর জানালেন, ‘সব কিছুরই তো একটা স্থান-কাল-পাত্র আছে। ইচ্ছে হচ্ছে বলে, তহালে কি যে কোনো জায়গায় টয়লেটও করতে পারি? পারি না! সেরকমই। আরেকটা জিনিস হচ্ছে, বিদেশে লোকে ওরকম করে। সেটা তাঁদের সংস্কৃতি। আমাদের দেশে সেটা চলে না। ওখানে কেউ ফিরেও তাকাবে না। কিন্তু আমাদের দেশের এটা রীতি নয়। আমাদের দেশের যে মূল্যবোধ, যে সংস্কৃতি, সেটাকে ধরে রাখা উচিত। বিশেষ করে পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভেবে। যারা অল্প বয়সী ছেলে-মেয়ে, তারা কী শিখবে। তারা তো আরও লাগামছাড়া হয়ে যাবে।’
মমতা শঙ্করের যুক্তি, যদি মেট্রো স্টেশনে প্রকাশ্যে চুম্বন আদতে দৃষ্টি-মধুর হত, তাহলে এত কথা হত না সেটার বিপক্ষে। কিছু লোকের অবশ্যই অস্বস্তি হচ্ছে এসব দেখে, সেই কারণেই কথা হচ্ছে। বললেন, ‘এবার কেউ বলতে পারে, এটা আমার ব্যক্তি স্বাধীনতা। ভালো লাগছে, তাই করছি। আমার কথা হল, তোমার ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য, যদি অন্য কারও অস্বস্তি হয়, অন্য কারও দৃষ্টিকটু লাগে, যদি সেটা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য খারাপ হয়, তাহলে?’ সঙ্গে নিজের কথায় জুড়লেন, ‘আমি যদি এটা দেখে, গিয়ে একটা চড় মারি! কি না, আমার এটা ভালো লাগছে না দেখতে। তুমি আমার ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছ, আমাকে অসুবিধায় ফেলছ। ওরা কি সেটা মেনে নেবে? না কি সেটা উচিত হবে?’
প্রকাশ্যে চুম্বনকে যারা সমর্থন করছেন, তাঁদের নিয়ে মমতা শঙ্করের বক্তব্য, ‘আমার মনে হয়, এটা যারা সমর্থন করছে, তাঁরা তাঁদের নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে। আমি যথেষ্ট আধুনিকা। আমি একেবারেই প্রাচীনপন্থী বা রক্ষণশীল মানসিকতার নই। আমার যেটা ঠিক মনে হয়, আমি বলবই।’ সঙ্গে পালটা প্রশ্ন ছুঁড়লেন, ‘ভালোবাসা দেখানোর জন্য তো পার্ক আছে, লেকের ধার আছে! এটা সস্তা পাবলিসিটি। নিজেদের পরিচিতি তৈরি করার একটা পথ।’
আঁচল বিতর্ক প্রসঙ্গে
এর আগে শাড়ির আঁচল নিয়ে কথা বলেছিলেন মমতা শঙ্কর। যা বড় বিতর্কর সূচনা করেছিল। যদিও তাঁর কথার উদ্দেশ্যই ছিল, সব জায়গায় খোলামেলা ভাবে আঁচল নেওয়া মানায় না! অথবা নিজেকে আধুনিকা প্রমাণ করার জন্য, খোলামেলাভাবে শাড়ি পরারও দরকার পড়ে না। তবে সেই নিয়েও একাংশ প্রবল আক্রমণ করে নেটদুনিয়ায়। সেই সময়তেও কিছু তারকা চলে যান মমতা শঙ্করের বিপক্ষে। তাহলে কি তিনি সফট টার্গেট হয়ে উঠেছেন?
এমন প্রশ্ন হেসে উড়িয়েই দিলেন তিনি। স্পষ্ট করলেন, একেবারেই গায়ে মাখেন না ট্রোল। জবাব এল, ‘আমি যে কত প্রশংসা পেয়েছি এটার জন্য। শিকাগোতে গিয়েছিলাম এনএবিসির জন্য, সেখানে কত মানুষ আমাকে এসে বলেছে, 'আপনি যে কী ভালো বলেছেন। এটা বলার দরকার ছিল। আমাদের বলার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু আমরা বলতে পারিনি। আপনি একটা রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছেন। আমাদের বলার সাহস দেখিয়েছেন'। কে কী বলল, ট্রোল করল, আমরা কিছু যায় আসে না। কারণ আমি জানি আমি কী বলছি, আমি জানি কোনো অন্যায় কথা বলছি না। পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভাবতে হবে আমাদের। কী পৃথিবীতে আমরা ওদের রেখে যাচ্ছি। কী সাংঘাতিক, একটা জায়গায় ওদের রেখে যাচ্ছি। আমাদের আগের জেনারেশনের কথাও ভাবতে হবে। আমাদের মা-দিদিমা-কাকা-জ্যাঠা তাদেরও তো অস্বস্তি লাগে এসব দেখলে’।