খরচ হয়েছে ১,৭৪৯ কোটি টাকা। সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শুরু করে ১০০ একরের জলাশয় স্থান পেয়েছে ক্যাম্পাসে। আধুনিকতার মোড়কে নতুন করে জেগে উঠেছে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৯ জুন, বিহারের রাজগীরে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস উদ্বোধন করেছেন। সঙ্গে একটি চারা রোপণও করে এসেছেন তিনি। প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে এই নতুন ক্যাম্পাস তৈরি করা হয়েছে।
ইতিহাস থেকে আধুনিকতায় নালন্দার পথ চলা
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল পঞ্চম শতাব্দীতে। এটি একসময় সারা বিশ্বের পণ্ডিতদের জন্য মূল আকর্ষণের কেন্দ্র ছিল। এই ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠান ১২ শতকে ধ্বংসের মুখে পড়েছিল। এটি প্রায় ৮০০ বছর আগে হানাদারদের দ্বারা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালে, এই স্থানটিকে 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট' বলে ঘোষণা করেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। আজ সেই বিশ্ববিদ্যালয় নতুন করে জেগে উঠেছে। আজকের এই অত্যাধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০১৪ সালে মাত্র ১৪ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি অস্থায়ী স্থান থেকে পথ চলা শুরু করেছিল। এরপর ২০১৭ সালে নতুন ক্যাম্পাসের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছিল। এবার ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে যেন প্রাণ পেয়েছে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়।
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস কেন এত অনন্য
নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫৫ একর বিস্তৃত নতুন ক্যাম্পাস শক্তিশালী উন্নয়নের একটি প্রধান উদাহরণ। এটিকে একটি 'নেট জিরো গ্রিন ক্যাম্পাস' হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানেই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ উদ্যোগের এক ঝলক:
- ১০০ একরেরও বেশি জলাশয়: ক্যাম্পাসে সুন্দর কমল সাগর পুকুর রয়েছে, যা পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি জল সংরক্ষণ এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষাও করে।
- সৌর শক্তি: এখানকার একটি অন-গ্রিড সৌর প্ল্যান্ট সৌর শক্তিও সরবরাহ করে। যা এই দূষণের পরিবেশে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা হ্রাস করে।
- জলের সু-ব্যবস্থাপনা: এই ক্যাম্পাসের একটি অত্যাধুনিক জল শোধনাগার বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করে। এছাড়াও এখানে একটি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য জলের প্ল্যান্ট রয়েছে, যা বর্জ্য জল সেচ এবং অন্যান্য উদ্দেশ্যে পুনরায় ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
- সবুজ আচ্ছাদনে ভরা পরিবেশ: ক্যাম্পাসের ১০০ একরেরও বেশি জায়গা সবুজের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে। একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য, স্বাভাবিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসের এই স্থান অন্যতম।
শিক্ষা ও সুস্থতার একটি কেন্দ্র নালন্দার এই ক্যাম্পাস
নতুন ক্যাম্পাসের বাসিন্দাদের শিক্ষা এবং শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রচুর সুবিধা পাবেন। এখানে তেমনই কিছু মূল বিষয় হাইলাইট করা হয়েছে:
- অত্যাধুনিক একাডেমিক সুবিধা: স্মার্ট বোর্ড এবং ডিজিটাল টুল দিয়ে সজ্জিত ক্লাস, যা সমসাময়িক শিক্ষার অভিজ্ঞতা প্রদান করে। একটি সুন্দর করে সাজানো লাইব্রেরি, একটি আর্কাইভাল সেন্টারও রয়েছে। এমনকি গবেষণাও এখানে সুসজ্জিত এবং উন্নত ল্যাবের ব্যবস্থাদি করা হয়েছে। ২৬টি বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে। পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন, ডক্টরাল রিসার্চ কোর্স, শর্ট সার্টিফিকেট কোর্স, আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য ১৩৭ বৃত্তি প্রযোজ্য রয়েছে।
- হোলিস্টিক কল্যাণের উপর ফোকাস করা হয়: একটি যোগা কেন্দ্র রয়েছে। একসঙ্গে ২৫০ জন শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য যোগা করতে পারবেন। এছাড়াও একটি সম্পূর্ণ সজ্জিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স রয়েছে, যা ছাত্র এবং শিক্ষকদের ফিটনেস চাহিদা পূরণ করে।
- অডিটোরিয়াম এবং কনফারেন্স হল: ক্যাম্পাসে একাডেমিক আলোচনা, কনফারেন্স এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। ক্যাম্পাসে মোট ৪০টি ক্লাস সহ দু'টি একাডেমিক ব্লক রয়েছে। এই ক্লাসে প্রায় ১,৯০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে পারেন। অতিরিক্তভাবে, এখানে দু'টি অডিটোরিয়াম রয়েছে, প্রতিটিতে ৩০০ আসনের ধারণক্ষমতা রয়েছে। নতুন ক্যাম্পাসে পড়ুয়াদের জন্য একটি হোস্টেলও রয়েছে, যা প্রায় ৫৫০ জন ছাত্রের থাকার ব্যবস্থা করতে সক্ষম।
উল্লেখ্য, প্রকৃতপক্ষে, প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের সমৃদ্ধ ইতিহাসের একটি অমোচনীয় দলিল, যা প্রাচীন ভারতের গৌরবময় অতীতকে প্রতিফলিত করেছিল। কিন্তু, খিলজি রাজবংশের হানাদাররা লুটপাট, গণহত্যা এই উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।