কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়েছে সোমবার। তাতে মূল লড়াই ছিল মেডিক্যাল কলেজ ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (এমসিডিএসএ) এবং ডিএসও-র মধ্যে। এই নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছে এমসিডিএসএ। ২০টি আসনের মধ্যে তারা ১৭টি আসনে জয়ী হয়েছে। এছাড়া, একটি আসনে জিতেছে এসইউসিআই’র ছাত্র সংগঠন ডিএসও, আর দুই নির্দল প্রার্থী দু’টি আসনে জয় পেয়েছেন। মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী দেবাশিস হালদার এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র অনিকেত মাহাতো তথা আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম মুখ এই দুজনেই নির্বাচনকে গণতন্ত্রের জয় বলেছেন।
আরও পড়ুন: বিরাট সাফল্য! দেশের সেরা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলির তালিকায় নবম কলকাতা মেডিক্যাল
দীর্ঘ টালবাহানার পর সোমবার সকালে কলেজে ছাত্রভোট অনুষ্ঠিত হয়। ভোটারের সংখ্যা ছিল এক হাজার। বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৭৭.৮ শতাংশ ভোট পড়ে। নির্বাচনে বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করলেও শাসকদল তৃণমূল কোনও প্রার্থী দেয়নি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) এ নির্বাচনে প্রার্থী না দেওয়ার পাশাপাশি ভোটের বিরোধিতাও করেছে। তারা নির্বাচনকে অবৈধ বলে অভিযোগ করেছে।তারা দাবি করেছে, স্বাস্থ্য ভবন বা ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অফ হেল্থ সায়েন্সেস থেকে নির্বাচন সম্পর্কে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি।
মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী দেবাশিস হালদার এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র অনিকেত মাহাতো এই নির্বাচনের মুখোমুখি প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। উল্লেখ্য, দেবাশিস এমসিডিএসএ’র, আর অনিকেত এসইউসিআই’র ডিএসও’র সঙ্গে যুক্ত। আরজি করের মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের পর রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নিরাপত্তা ও উন্নতির দাবিতে তাঁরা একসঙ্গে আন্দোলন করছিলেন। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’ গড়ে তোলা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের আগে মেডিক্যাল কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একটি ইউনিট ছিল, যা আরজি কর-কাণ্ডের পর বিলুপ্ত হয়। সিপিএম ছাত্র সংগঠন এসএফআইও কলেজে কার্যত অনুপস্থিত।এই ভোটের পর দেবাশিস ও অনিকেত দু’জনই বলেছেন, এই নির্বাচন দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াই ছিল। তাঁদের মতে, ভোটের মাধ্যমে ছাত্র সমাজ ‘থ্রেট কালচার’ বা হুমকি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী জবাব দিয়েছে।দেবাশিস বলেছেন, ৮০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ভোট দিয়েছেন, যা মেডিক্যাল কলেজের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বড় সাফল্য। অনিকেতও একইসুরে বলেছেন, ‘এই ফলাফল থেকে স্পষ্ট যে গণতান্ত্রিক পরিসরে তৃণমূলের কোনো জায়গা নেই।’
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে ছাত্র সংসদের নির্বাচন দাবিতে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা ১২ দিন ধরে অনশন করেছিল। তখন তাঁরা নিজেরাই ভোট করেছিলেন।কিন্তু, তা নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। শেষ পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত সেটি মেনে নেয়। এমসিডিএসএ দাবি করে, ২০২৩ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের চাপে ভোট করিয়েছিল। কিন্তু ২০২৪ সালে আরজি কর-কাণ্ডের কারণে ভোট বন্ধ ছিল। তাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ২০২৫ সালের মার্চে রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজে নির্বাচন হবে, কিন্তু এখনও তা হয়নি। সংগঠনের এক নেতা বলেন, শাসকদল বাধা দিলেও এই নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে। এটি ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সব কলেজেই নিয়মিত এবং স্বচ্ছ নির্বাচন করতে হবে।