উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থানার অধীনে একটি ধর্ষণ মামলায় তদন্তের গাফিলতি নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে পুলিশ। ৪ বছর আগে ২০২১ সালে দায়ের হওয়া ওই মামলায় চারজন অভিযুক্তের মধ্যে দু’জনকে ‘পলাতক’ বলে চিহ্নিত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। অথচ, দুজন বাড়িতেই বসবাস করছে বলে জানতে পেরেছে আদালত। তারপরেই পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে আদালত।
আরও পড়ুন: তরুণীর অর্ধনগ্ন নলিকাটা দেহ উদ্ধার মুর্শিদবাদে! ধর্ষণ করে কি খুন? তদন্তে পুলিশ
বনগাঁর দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক প্রদীপকুমার অধিকারীর এজলাসে এই মামলার চার্জ গঠন হচ্ছে। সেই সময় এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, চার্জ গঠনের সময় আদালতে হাজির হয়ে জামিন পাওয়া দুই অভিযুক্ত জানান, চার্জশিটে যাদের ‘পলাতক’ বলা হয়েছে, তারা নিজের বাড়িতেই থাকছে। এমন তথ্য সামনে আসতেই বিচারক ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
সরকারি কৌঁসুলিকে উদ্দেশ্য করে বিচারকের মন্তব্য, এটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর মামলায় কী ধরনের তদন্ত করেছে পুলিশ? তারা বাড়িতে থাকলে, চার্জশিটে পলাতক বলা হল কোন ভিত্তিতে? তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি পুলিশি তদন্তে স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
বিচারক স্পষ্ট ভাষায় জানান, এমন গাফিলতিতে মামলার বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তিনি নির্দেশ দেন, পলাতক দেখানো দুই অভিযুক্তকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিতে হবে এবং তারপর চারজনের বিরুদ্ধে একযোগে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করতে হবে। এর পরই সরকারি পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন করা হয়। বিচারক তা সঙ্গে সঙ্গেই অনুমোদন করেন। বাগদা থানাকে সেই পরোয়ানা কার্যকর করার নির্দেশও দেন তিনি।
পাশাপাশি, তদন্তকারী অফিসার এবং থানার ওসির ভূমিকা নিয়েও বিচারক তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারক। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন জেলা পুলিশ সুপারকে। আগামী ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে এসপিকে এ বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক।
বনগাঁ আদালতের আইনজীবী মহলের মতে, এ ধরনের ঘটনা অভাবনীয়। আদালতের সক্রিয় হস্তক্ষেপ এবং কঠোর নির্দেশ কার্যকর করতে হবে। এই ঘটনার পর পুলিশি তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।