প্রকল্পের নাম ‘তরুণের স্বপ্ন’। এই প্রকল্পের মাধ্যমেই উচ্চশিক্ষার জন্য রাজ্য সরকার প্রত্যেক তরুণ–তরুণীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠায়। যাতে তারা ট্যাব কিনে বাড়তি পড়াশোনা করতে পারে। পরীক্ষা ভাল করে দিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। সেই ট্যাব নিয়ে দুর্নীতি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। তাতে অনেকেই গ্রেফতার হয়েছিল। কিন্তু এই দুর্নীতির ‘মাস্টারমাইন্ড’ অধরা ছিল। আজ, বুধবার ট্যাব দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ডকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ ধরেছে চোপড়ার মাঝিয়ালি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে। গোটা প্রতারণার নেপথ্যে একটা চক্র তৈরি করে এই ট্যাব দুর্নীতি করা হয়েছিল।
এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, নিজের বাড়িতে ব্যাঙ্কের কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট চালানোর মোড়কে গ্রাহকদের ব্যাঙ্কিং তথ্য হাতিয়ে প্রতারণার জাল তৈরি করেছিলেন চোপড়ার মাঝিয়ালি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকাও হাপিস করে দেওয়ার পিছনে এই মাস্টারমাইন্ডই ছিল। বেশ কয়েকটি স্কুলে প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। তার মধ্যেই বড় মাথা ছিল চোপড়ার মাঝিয়ালি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। ট্যাব প্রাপকদের অ্যাকাউন্ট নম্বর মুছে সেখানে অন্য অ্যাকাউন্ট নম্বর ভরে দেওয়া হয়েছিল। আর তারপরই নির্দিষ্ট সময়ে ওই অ্যাকাউন্টে টাকা চলে আসে। এভাবেই বিপুল পরিমাণ টাকা হস্তগত করেছিলেন ওই প্রধান শিক্ষক বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: এবারের কলকাতা বইমেলায় দুঃখের খবর মুক্তমনাদের জন্য, ‘মুক্তমঞ্চ’ থাকছে না
এই ট্যাব কেলেঙ্কারির পর রাজ্য সরকারের বদনাম হতে শুরু করেছিল। তখন সাইবার ক্রাইম পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করতে নামে। তদন্তে একাধিক প্রধান শিক্ষকের নাম উঠে আসে। এখন তাঁরা জেলে আছেন। কিন্তু মাস্টারমাইন্ডকে ধরা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে তদন্ত জারি রেখেছিল পুলিশ। এবার সে ধরা পড়েই গেল। চোপড়ার মাঝিয়ালি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যে নেপথ্যে আছেন তা প্রথমে কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। এখন সবাই জানতে পেরে স্তম্ভিত, হতবাক। দুর্নীতিতে জড়িয়ে স্বয়ং শিক্ষক। পুলিশ থেকে শুরু করে বহু পড়ুয়া এই ঘটনা জেনে একেবারে চুপ করে গিয়েছেন। স্বয়ং প্রধান শিক্ষক যদি এমন হয় তাহলে ছাত্রদের কী শেখাবেন? উঠছে প্রশ্ন।
চোপড়ার মাঝিয়ালি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নাম মহম্মদ মফিতজুল ইসলাম। তিনিই এই দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড। মাঝিয়ালি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে থেকে অ্যাকাউন্ট গরমিল করেছেন বলে অভিযোগ। আর এভাবেই সেই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। তার জন্য একাধিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু ট্যাব দুর্নীতি কাণ্ডে ধরপাকড় চলার সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অন্য একজন শিক্ষককে বুঝিয়ে দিয়ে ছুটিতে চলে যান তিনি। তারপর ওই প্রধান শিক্ষক জানিয়েছিলেন, তিনি অসুস্থ। নয়াদিল্লিতে চিকিৎসা করাতে যাচ্ছেন। কিন্তু এখন গেলেন হাজতে। রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু আগেই জানিয়েছেন, কয়েকটি জেলায় অল্প কিছু স্কুলে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। পুরো বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখছে।