দূর থেকে ভেসে আসছে একটা দুর্গন্ধ। যত সেদিকে এগোনো হচ্ছে তত বাড়ছে সেই দুর্গন্ধ। কাছাকাছি যেতেই চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হবে। কারণ মরা পোড়ানোর জন্য সেখানে কাঠ নেই। একের পর এক লাশ পড়ে আছে। বেওয়ারিশ সেই লাশ পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। যার জেরে একের পর এক বেওয়ারিশ লাশ জমেছে শ্মশানে। ওই পচে যাওযা লাশ থেকে চুঁইয়ে রক্ত পড়ছে। বেওয়ারিশ লাশগুলি গাড়িতে রাখা আছে। এমন নরক পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে দুর্গাপুরের বীরভানপুর মহাশ্মশানে। আর এই দুর্গন্ধে অতিষ্ট শ্মশানযাত্রীরা। যদিও শ্মশান কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, আজ রাতের মধ্যেই সব দেহ দাহ হয়ে যাবে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, তিনদিন কেটে গিয়েছে। কাউকে কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। শ্মশানের সামনে বেওয়ারিশ লাশের গাড়ি থেকে দুর্গন্ধ, রক্ত বেরিয়েই চলেছে। এখানে দেহ পোড়ানো হয়নি কারণ জ্বালানি কাঠ নেই। সাতটি বেওয়ারিশ লাশ জমে থাকায় তাতে পচন ধরেছে। তার সঙ্গে রক্ত বের হচ্ছে। আর দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা এলাকায়। মুখে কাপড়, গামছা বেঁধে মানুষজন যাতায়াত করছেন। এখান থেকে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা তারক রায় বলেন, ‘এই শ্মশানের কাছেই একটা কালীমন্দির আছে। পুজো দিতে এসে যা দুর্গন্ধ পেলাম তাতে অন্নপ্রাসনের ভাত উঠে আসার জোগাড়। নাকেমুখে কাপড় বেঁধে খুব একটা লাভ হচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: বুনো হাতিদের ঠিকুজি তৈরি করছে বন দফতর, অরণ্য ভবন নজরদারি করবে পোর্টালে
এখানে আগে কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। তিনদিন ধরে এখানে প্রাণ ওষ্ঠাগত অবস্থা হয়েছে। শ্মশানের ধারেকাছ দিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। অথচ শ্মশানের পাশেই রয়েছে পুরসভা। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হলেও সেখানের কর্মীরাও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। কারও যেন কোনও গা নেই। তাই বিরোধী দল বিজেপির সহ–সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘শ্মশান থেকে শুরু করে দুর্গাপুর পুরসভাতেও দুর্গন্ধে ভরে গিয়েছে। কাঠ নেই বলেই বেওয়ারিশ লাশ পড়ে আছে। তিনদিন ধরে জ্বালানি কাঠ না মেলায় চরম সমস্যায় ভুগছেন সকলে।’
তবে বিষয়টি এখানে শেষ নয়, এই দুর্গন্ধ সহ্য করতে না পেরে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বেশ কিছু স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্গাপুর পুরসভাকে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি বলেই অভিযোগ। আর এই বিষয়ে দুর্গাপুর পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য রাখি তিওয়ারি বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ এই দেহগুলি দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে এখানে নিয়ে আসা হয়। আর ২৭ মার্চ কাঠ শেষ হয়ে যায়। তার জেরেই এই দেহগুলি দাহ হয়নি। তারপর ২৮ মার্চ চৈতি অমাবস্যার জন্য দাহকাজ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। আজ শনিবার রাতে সব দেহগুলি দাহ করা হবে।’