১০ বছরের জন্য ওই সব সরকারি হাসপাতালের জমিতে নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে চালাতে পারবে বেসরকারি সংস্থা। ৩৩ বছর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থাকে ওই পরিকাঠামো ব্যবহার করতে দেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ৬০ থেকে ১০০ জন পড়ুয়া নিয়ে ওই নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা যাবে।
নার্সিং ট্রেনিং। (ছবিটি প্রতীকী, সৌজন্য পিটিআই)
সরকারি–বেসরকারি সব হাসপাতালেই এখন নার্সের প্রয়োজন। তাই রাজ্যে নার্সিং ট্রেনিংয়ের চাহিদা বাড়ছে। তাই নার্স তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। এখন সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো ব্যবহার করে মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে বেসরকারি সংস্থার হাতে। এবার রাজ্যের মোট ১৬টি হাসপাতালের পরিকাঠামো ব্যবহার করে নার্সিং স্কুল বা কলেজ তৈরির জন্য বেসরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাল স্বাস্থ্য দফতর। তাতে নার্সের প্রশিক্ষণ নিয়ে নার্স তৈরি হবে ঠিকই, কিন্তু বেসরকারিকরণের একটা বড় অভিযোগ গায়ে লাগতে বসেছে। এই বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
এদিকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এই সিদ্ধান্তকে নিয়ে এখন জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কেন এভাবে নার্স তৈরির কৌশল নেওয়া হল? সরকারি উদ্যোগেই কেন নার্সিং ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে না? এইসব প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে এই প্রশ্নগুলির উত্তরে নার্সদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বহু সংখ্যক নার্সরা প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরেও তাঁদের চাকরি দিতে পারছে না রাজ্য সরকার। তাই বেসরকারি নার্সিংহোম–হাসপাতালে চাকরি করতে যাচ্ছেন তাঁরা। তাই এভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেসরকারিকরণের প্রচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী চিকিৎসক শিবির।
অন্যদিকে এই অভিযোগ মানতে রাজি নয় স্বাস্থ্য দফতর। বরং স্বাস্থ্য দফতরের পাল্টা দাবি, ইন্ডিয়ান নার্সিং কাউন্সিলের নির্দেশিকা মেনেই এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ১৬টি সরকারি হাসপাতালের পরিষেবার মান আরও উন্নত এবং বৃদ্ধির চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য দফতর। সূত্রের খবর, বহু বেসরকারি সংস্থার কাছে চিকিৎসক, লোকবল, অর্থ আছে। কিন্তু নার্সিং প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো হাসপাতাল নেই। এবার নার্সিং স্কুল বা কলেজের জন্য একটি মেডিক্যাল কলেজ, একটি জেলা হাসপাতাল এবং ১৪টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানেই দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ।
আর ১০ বছরের জন্য ওই সব সরকারি হাসপাতালের জমিতে নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে চালাতে পারবে বেসরকারি সংস্থা। পরে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থাৎ ৩৩ বছর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থাকে ওই পরিকাঠামো ব্যবহার করতে দেওয়া হবে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ৬০ থেকে ১০০ জন পড়ুয়া নিয়ে ওই নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা যাবে। এই বিষয়ে ‘নার্সেস ইউনিটি’র সাধারণ সম্পাদক ভাস্বতী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘যে নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি আছে সেগুলির আসন বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু সেগুলির পরিকাঠামোর সমস্যা রয়েছে। সেটা ঠিক না করে উল্টে বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে। এটা ঠিক সিদ্ধান্ত নয়।’ রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সদস্য কৌশিক বিশ্বাসের দাবি, সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো বা জমি ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট অর্থ দেবে বেসরকারি সংস্থা। সেটিকে মুনাফা অর্জন না ভেবে সরকারি ব্যবস্থার সম্পূর্ণ ব্যবহার ভাবা প্রয়োজন।