পরবর্তী খবর
বাংলা নিউজ > টুকিটাকি > পরিষ্কার থাকা সত্ত্বেও, দুর্গন্ধ বেরোয় বাথরুম থেকে! জেনে নিন সুগন্ধ ছড়ানোর উপায়
বাথরুম যাতে পরিষ্কার-পরিছন্ন ও ঝাঁ চকচকে হয়, প্রত্যেকেই চান এটি। কিন্তু কখনও কখনও, সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, বাথরুম থেকে একটি অদ্ভুত গন্ধ বের হতে থাকে। আমরা চাইলেও এই গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে পারি না। এই কারণে, আমার বাথরুমে যেতে ইচ্ছে করছে না। অনেক সময় অতিথিদের সামনেও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
পরিষ্কার করার পরেও বাথরুমে দুর্গন্ধের কারণ কী
- ড্রেনে জমে থাকা ময়লা: চুল, সাবানের ময়লা, টুথপেস্ট, চুলের টুকরো এবং অন্যান্য ছোট ছোট জিনিস বাথরুমের পাইপ এবং ড্রেনেজ লাইনে আটকে যায়। ধীরে ধীরে এই জিনিসগুলি পচতে শুরু করে এবং পাইপ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করে। বিশেষ করে যখন পাইপগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না, তখন এই ময়লা দুর্গন্ধের একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- পাইপে লিক থাকতে পারে: বাথরুমের পাইপ, জল সরবরাহ বা অন্য কোনও পাইপে লিকেজ থাকতে পারে। এই কারণেও বাথরুম থেকে দুর্গন্ধ হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, যদি কোনও দুর্গন্ধ থাকে, তাহলে লিকেজটি খুঁজে বের করুন এবং এটি মেরামত করুন।
- মেঝের ঢাল সঠিক নয়: বাথরুমের টাইলস বা মেঝের ঢাল ঠিক না থাকলে, জল সম্পূর্ণরূপে ড্রেনে প্রবাহিত হয় না। এক কোণে জল জমে থাকে। এর ফলে সেখানে পোকামাকড় বা ছত্রাক জন্মাতে শুরু করে, যার ফলে দুর্গন্ধ হয়।
- বায়ুচলাচলের অভাব: যদি বাথরুমে জানালা, এক্সস্ট ফ্যান বা অন্য কোনও বায়ুচলাচল ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে বাতাস বেরিয়ে যেতে পারে না। এর ফলে আর্দ্রতা বজায় থাকে। এই আর্দ্রতা বাথরুমের দুর্গন্ধকে দীর্ঘক্ষণ ধরে রাখে এবং বাথরুমে শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ তৈরি করে।
- নর্দমার গ্যাস লিক: যদি নর্দমা লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত পাইপ বা সিলিংয়ে কোনও লিকেজ থাকে বা জয়েন্টটি আলগা হয়ে যায়, তাহলে সেখান থেকে নর্দমার গ্যাস বের হতে শুরু করে। এই গ্যাসের গন্ধ খুব তীব্র এবং কখনও কখনও এর কারণে বাথরুমে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এটি উপেক্ষা করা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে।
- টয়লেট সিট বা সিঙ্কের ফিটিং ঠিকমতো না থাকা: যদি টয়লেট সিট, সিঙ্ক বা ওয়াশ বেসিন সঠিকভাবে লাগানো না থাকে বা লিকেজ থাকে, তাহলে জলের লিকেজ সহ ভেতর থেকে দুর্গন্ধও বের হতে শুরু করে। অনেক সময়, এই জায়গাগুলিতে জমে থাকা ময়লা এবং ভাঙা সিলগুলির কারণেও দুর্গন্ধ হয়, যা নিয়মিত পরিষ্কার করার পরেও দূর হয় না।
দুর্গন্ধের এই সমস্যাটি কীভাবে সমাধান করবেন
- নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার করুন: সময়ে সময়ে ড্রেনেজ সিস্টেম পরিষ্কার করতে থাকুন। দীর্ঘ সময় ধরে পরিষ্কার না করার কারণে ময়লা জমে, যা দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।
- মেঝের ঢাল দেখে রাখুন: যদি এক কোণে জল জমে থাকে, তাহলে মেঝের ঢাল সঠিক নয়। ঢালটি প্লাম্বার দিয়ে ঠিক করে নিন যাতে জল জমে না থাকে এবং দুর্গন্ধ না হয়।
- বাথরুমে বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা করুন: যদি বাথরুমে জানালা না থাকে, তাহলে একটি এক্সজস্ট ফ্যান লাগান। প্রতিদিন বাথরুমের দরজা-জানালা খুলে বাতাস পরিবর্তন করুন। এতে বাথরুমে তৈরি গ্যাস বের হয়ে যাবে।
- নর্দমার গ্যাসের দিকটি খেয়াল রাখুন: মেঝে বা সিঙ্কের নিচে অবস্থিত পি-ট্র্যাপ বা ইউ-ট্র্যাপে জলের অভাবের কারণে নর্দমার গ্যাস উঠে আসে। মাঝে মাঝে জল যোগ করতে থাকুন যাতে গ্যাস বন্ধ থাকে।
- ফিটিং পরীক্ষা করুন: যদি টয়লেট সিট, সিঙ্ক বা পাইপ থেকে লিকেজ হয়, তাহলে প্লাম্বার দিয়ে ফিটিংটি মেরামত করান।
বাথরুমের দুর্গন্ধ দূর করার প্রাকৃতিক প্রতিকার কী কী
বাথরুম এমন একটি জায়গা যেখানে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে, নর্দমা, নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সমস্ত জিনিস মেরামত করার পরে, বাথরুমের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় কাজে লাগানো যেতে পারে।
- বেকিং সোডা এবং ভিনেগার: ড্রেনেজ সিস্টেমে বেকিং সোডা ঢেলে দিন, তারপর তার উপর কিছু সাদা ভিনেগার ঢেলে দিন। এতে ফেনা তৈরি হতে শুরু করবে। কয়েক মিনিট পর গরম পানি দিন। এটি পাইপ থেকে ময়লা দূর করে।
- লেবু এবং বেকিং সোডা স্প্রে: একটি স্প্রে বোতলে লেবুর রস, এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা এবং কিছু জল মিশিয়ে নিন। বাথরুমের দেয়াল, টাইলস এবং ওয়াশ বেসিনে এই দ্রবণটি স্প্রে করুন। কয়েক মিনিট পর পরিষ্কার করুন। এতে বাথরুম সতেজ থাকবে।
- নিম পাতা বা নিম তেল: নিমের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বাথরুমে কিছু নিম পাতা ঝুলিয়ে দিন অথবা জলে নিম তেল মিশিয়ে মেঝে ধুয়ে ফেলুন। এটি জীবাণুগুলিকে মেরে ফেলবে এবং যে কোনও দুর্গন্ধও রোধ করবে।
- কফি বিন বা চা পাতার ব্যবহার: কফির গন্ধ দুর্গন্ধকে ছাপিয়ে যায়। একটি ছোট পাত্রে কিছু কফি বিন বা ব্যবহৃত চা পাতা শুকিয়ে বাথরুমে রাখুন। কয়েকদিন পর পর এগুলো পরিবর্তন করতে থাকুন।
- চা গাছের তেল এবং জল স্প্রে: চা গাছের তেলের ছত্রাক-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি জলে মিশিয়ে বাথরুমে স্প্রে করুন। আর্দ্রতা কমে যাবে এবং সুগন্ধ সতেজতা দেবে।
- সুগন্ধি এসেনশিয়াল: অয়েল স্প্রেলেবু, ল্যাভেন্ডার, রোজমেরি বা টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েল জল এবং সামান্য সাদা ভিনেগারের সঙ্গে মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে রাখুন। বাথরুম ব্যবহারের পর প্রতিবার স্প্রে করুন।
- নারকেল তেল এবং লবঙ্গ স্প্রে: কিছু পরিমাণ নারকেল তেল গরম করুন, এতে ৪-৫টি লবঙ্গ যোগ করুন এবং ঠান্ডা হতে দিন। তারপর এটি জলের সঙ্গে মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে ভরে নিন। এই প্রাকৃতিক স্প্রে দুর্গন্ধের প্রভাব কমায়।
- ঘরে তৈরি প্রাকৃতিক সুগন্ধি মোমবাতি: আপনার পছন্দের মোম, নারকেল তেল এবং এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে বাড়িতে একটি সুগন্ধি মোমবাতি তৈরি করুন। এতে বাথরুম সুগন্ধযুক্ত থাকবে।
- ইউক্যালিপটাস তেল স্প্রে: ইউক্যালিপটাস তেল জলে মিশিয়ে স্প্রে করুন। এর দরুণ বাষ্পের সঙ্গে সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে এবং বাথরুম সতেজ থাকে।