জৈষ্ঠ্যের সন্ধ্যা, বেশ গরম কলকাতায়। আকাশে একটুকরো মেঘের দেখা নেই। গরমে ঘামে ভিজে মন যখন একটু স্বস্তি চাইছে, তখনই হঠাৎ শীতল করে দেওয়া কালবৈশাখীর মতো, ঝটিকা সফরে শহরে এলেন ইমতিয়াজ আলি। সাদা কালো চেক শার্ট সঙ্গে সেই ঝাঁকড়া চুল, ঠোঁটের কোণে লেগে স্নিগ্ধ হাসি। অসংখ্য মানুষের ভিড়ে শান্ত, সুন্দর ব্যবহার ও স্মিতভাষেই ফের একবার মন জয় করলেন তিনি।
মাইক হাতে নিয়ে প্রথমেই বললে, 'যে কোনও অজুহাতে কলকাতায় আসাটাই একটা বড় অজুহাত। কলকাতায় আসা মানে বাড়ি ফেরা।' আর তা হবে না-ই বা কেন। জামশেদপুরের ছেলে তিনি। কিন্তু কলকাতাতে জীবনের বেশ কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছেন ইমতিয়াজ। তাঁর কথায়, 'পুরো দেশের মধ্যে কলকাতা আমার অন্যতম পছন্দের একটা শহর। আমার জীবনের প্রথম মেট্রোপলিটন সিটি। এই শহরে দেশের সেরা সেরা খাবারগুলো পাওয়া যায়। এই শহরে সেরা চা-ও মেলে। সুরের শহর এই কলকাতা। কলকাতার মানুষজন ভীষণ ভাবে সংস্কৃতি মনস্ক। তাই এখানে ভালো ভালো ছবি দেখেন দর্শকরা, গল্প পড়েন। এখানে 'বাত'-কেও কথা বলে। কথকদের শহর এই কলকাতা। এখানে অনেক কিছু আছে। কিন্তু তাছাড়াও এই শহরটা আমার খুব কাছের কেন জানেন? কারণ এটা আমার কাছে দ্বিতীয় বাড়ির মতো। ছোটবেলা থেকে আমি এখানে আসি। কলকাতার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এখানে এলে আমার অনেক মানুষের কথা মনে পড়ে যায়। একটা মজার ব্যাপার হল, কলকাতায় এলে কারুর ওজন বাড়ে না। তেঁতুলগোলা জলে হাত ডুবিয়ে ফুচকা দিলেও তাঁর স্বাদ হয় অনবদ্য।'
তাই এরপর কলকাতার প্রেক্ষাপটেই ছবি বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইমতিয়াজের। তিনি কলকাতার কেবল বাঙালি নয়, বরং অ্যাঙ্গলো ইন্ডিয়ান থেকে শুরু করে শহর জুড়ে আরও নানা গোষ্ঠীর যে সংস্কৃতি ছড়িয়ে রয়েছে, তা নিজের ছবিতে তুলে ধরতে চান। পরিচালকের মতে, 'আমার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে কলকাতার প্রেক্ষাপট নিয়ে। এখানে এত ধরনের মানুষ, তাঁদের মধ্যে এত আলাদা আলাদা রকমের সাংস্কৃতিক ধারা, সবটা আমাকে ভীষণ ভাবে অবাক করে। তাই এই সব নিয়ে আমার বেশ কিছু ভাবনা রয়েছে। সব ঠিক থাকলে খুব তাড়াতাড়ি আমি কলকাতা নিয়ে ছবির কাজ শুরু করব।'
তিনি জানান বাংলার চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাঁকে নানা ভাবে উদ্বুদ্ধ করে। তাঁর কথায়, 'সত্যজিৎ রায় থেকে ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, গৌতম ঘোষ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত আরও অনেক বড় বড় চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা, সঙ্গীত শিল্পীদের উপহার দিয়েছে এই কলকাতা। পুরো দেশের মতো আমিও রবিঠাকুরের গানের ভক্ত। ওঁর গান, ওঁর কবিতা আমাকে অনুপ্রাণিত করে।' তবে কেবল পুরানো সময়কার নয়, হালের নানা বাংলা কাজও দেখেছেন তিনি। ইমতিয়াজের কথায়, 'সাম্প্রতিক সময়ের বাংলা ছবিও দেখি। আমার বেশ কিছু বন্ধু-বান্ধব আছেন, যাঁরা বাংলা ছবি বানাচ্ছেন। তাঁদের কাজ আমি দেখি। কিন্তু আমি চাই বাংলা ছবি যেন আরও ইমপ্রুভ করে। তবে বেশ কিছু কারণে আগের মতো বর্তমানে আর বাংলা ছবি হচ্ছে না, আমি চাই সেই ধরনের বাংলা ছবি ফের ফিরে আসুক। বাঙালিরা ফের আগের মতো করে দেশের মধ্যে সেরা ছবি বানান।'