সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান এবং পাকিস্তানের মদতের বিষয়টি গোটা বিশ্বের সামনে উন্মোচিত করতে বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।আর সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি কারুণানিধির নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল রাশিয়ায় পৌঁছেছে। এই প্রতিনিধিদল রাশিয়া ছাড়াও স্পেন, গ্রিস, স্লোভেনিয়া, এবং লাতভিয়া সফর করবে। এর আগে একটি প্রতিনিধিদল সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং আর একটি দল জাপানে পৌঁছেছে। জাপানে যাওয়া প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্বে রয়েছেন জেডিইউ সাংসদ সঞ্জয় ঝা। এই দলে রয়েছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আর আমিরশাহিতে যাওয়া দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন শিবসেনা সাংসদ শ্রীকান্ত শিন্ডে। (আরও পড়ুন: )
কানিমোঝি নেতৃত্বাধীন ৮ সদস্যের প্রতিনিধিদলের মধ্যে রয়েছেন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ রাজীব রাই, ন্যাশনাল কনফারেন্সের সাংসদ মিয়াঁ আলতাফ আহমেদ, বিজেপির সাংসদ ক্যাপ্টেন ব্রিজেশ চৌতা (অবসরপ্রাপ্ত), আপের সাংসদ অশোক কুমার মিত্তল, রাষ্ট্রদূত মঞ্জীব এস পুরি এবং রাষ্ট্রদূত জাভেদ আশরাফ। মস্কো পৌঁছেই সমাজবাদী পার্টির সাংসদ রাজীব রাই বলেন, 'রাশিয়া আমাদের পুরনো বন্ধু, যারা সমস্ত কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তান কেবল ভারতের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা রাশিয়ার মতো বিশেষ বন্ধুর কাছে প্রমাণ নিয়ে এসেছি, যাতে ব্যাখ্যা করতে পারি যে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করা সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।'
অন্যদিকে ডিএমকে কানিমোঝি কারুণানিধি জানান, 'আমাদের উদ্দেশ্য হল বিশ্বের কাছে তুলে ধরা যে সন্ত্রাসবাদের কারণে ভারতে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং এমন একটি বিশ্ববিপর্যয়মূলক শক্তির বিরুদ্ধে কোন দেশই নিরব থাকতে পারে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধভাবে অগ্রসর হতে হবে।' তিনি আরও বলেন,এই প্রতিনিধিদলটি আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির প্রথম উপ-চেয়ারম্যান আন্দ্রে ডেনিসন, রাজ্য ডুমা কমিটির চেয়ারম্যান লিওনিদ স্লুটস্কি, রাশিয়ার উপ-বিদেশমন্ত্রী এবং রাশিয়ান ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিস্টিক্যাল স্টাডিজের পরিচালক, রাশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী (মিখাইল ইয়েফিমোভিচ) ফ্রাডকভের সঙ্গে দেখা করবে।
এর আগে শ্রীকান্ত শিন্দের নেতৃত্বাধীন দলটি বৃহস্পতিবার আবু ধাবিতে আমিরশাহির ফেডেরাল ন্যাশনাল কাউন্সিলের সদস্য আহমেদ মির খুরির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। পরেসোশ্যাল মিডিয়ায় শিন্দে জানান, 'অপারেশন সিঁদুরে ভারতের সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি আমরা পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেছি।' এই প্রতিনিধিদলে রয়েছেন বিজেপির মননকুমার মিশ্র, বিজেডির সস্মিত পাত্র, আইইউএমএল-এর মহম্মদ বশীর, বিজেপির এসএস অহলুওয়ালিয়া, অতুল গর্গ, বাঁসুরী স্বরাজ এবং প্রাক্তন কূটনীতিক সুজন আর চিনয়। প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে ছিলেন আমিরশাহিতে ভারতের রাষ্ট্রদূত সঞ্জয় সুধীরও।
অন্যদিকে, জেডিইউ সাংসদ সঞ্জয় ঝায়ের নেতৃত্বাধীন দলটি টোকিওতে গিয়ে জাপানে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত সিবি জর্জের সঙ্গে দেখা করে। পরে প্রতিনিধিদলের সদস্যেরা জাপানের বিদেশমন্ত্রী তাকেশি আইওয়ার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। সূত্রের খবর, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেন জাপানের বিদেশমন্ত্রী। এই প্রতিনিধিদলটিতে সঞ্জয় ছাড়াও রয়েছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপির অপরাজিত সারঙ্গী, ব্রিজলাল, প্রধান বড়ুয়া, হেমাঙ্গ জোশী, কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ, সিপিএমের জন ব্রিটাস এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মোহন কুমার।
এক্স হ্যান্ডেলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ‘ভারতের দৃঢ় অবস্থানকে বিশ্বমঞ্চে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে উপস্থাপন করার জন্য অল-পার্টি পার্লামেন্টারি ডেলিগেশনের অংশ হতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। টোকিওতে প্রথম দিনটি মহাত্মা গান্ধীজির মূর্তিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল, যা এডোগাওায় ভারত-জাপান সম্পর্ক এবং আমাদের শান্তি ও অহিংসার যৌথ মূল্যবোধের একটি স্থায়ী প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা জাপানের বিদেশমন্ত্রী সঙ্গে বৈঠকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অটল প্রতিশ্রুতি উপস্থাপন করেছি এবং সন্ত্রাসের অপরাধীদের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের আহ্বানে জাপানের ধারাবাহিক সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।’