ফের ছোট পর্দায় ফিরলেন অদিতি শর্মা। নতুন ধারাবাহিক নিয়ে নতুন রূপে তাঁকে এখন সোনি টিভিতে দেখা যাচ্ছে। ‘কথা আনকাহি’ ধারাবাহিকে তাঁকে কথার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে। ভারতের প্রথম অভিনয় কেন্দ্রিক রিয়েলিটি শো, ‘সিনেস্টার কী খোঁজ’ জিতেছিলেন অদিতি। ২০০৪ সালে সেই রিয়েলিটি শোয়ের হাত ধরে তাঁর সফর শুরু হয়। এরপর তাঁকে একাধিক হিন্দি, দক্ষিণী এবং পাঞ্জাবি ছবি, বিজ্ঞাপন, ধারাবাহিকে কাজ করতে দেখা গিয়েছে।
সম্প্রতি সোনি টিভিতে শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক ‘কথা আনকাহি’, সেখানেই তিনি মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন। আর কথার মতো অদিতিও একটি ছোট শহর থেকেই মুম্বাইয়ে এসেছিলেন নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে। আর এখন এই শহরটাই তাঁর নিজের শহর হয়ে উঠেছে। তিনি এই বিষয়ে বলেন, 'আমি বুঝি নতুন শহরে আসার পর ঠিক কেমন লাগে। এখানে না থাকে তোমার পরিবার, না থাকে কিছু, স্রেফ শূন্য থেকে নতুন করে শুরু করতে হয় সবটা।'
হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী জানান, দিল্লির একটি কলেজের এক সাধারণ কলেজ পড়ুয়া থেকে তাঁর সফর শুরু হয়েছিল, সেখান থেকে রিয়েলিটি শোতে যান এবং জেতেন। তারপর ধীরে ধীরে এখন জীবনের এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছেন যেখানে তিনি এখন অর্থনৈতিক এবং ইমোশনাল দুইভাবেই স্টেবল।
অদিতিকে এখন যে ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্রে দেখা যাচ্ছে, অর্থাৎ কথা আনকাহিতে, সেই আদতে একটি তুর্কি সিরিজ ওয়ান থাউজ্যান্ড অ্যান্ড ওয়ান নাইট বা আরব্য রজনীর হিন্দি রিমেক। তাঁর বিপরীতে এই ধারাবাহিকে আদনান খানকে দেখা যাবে। এখানে আদনান তাঁর বসের চরিত্রে অভিনয় করবেন, যাঁর নাম ভিয়ান। অভিনেত্রী এই ধারাবাহিকের বিষয় বলেন, 'এমন কিছু ঘটে যাতে তাঁদের জীবন সম্পূর্ণ ওলোট পালোট হয়ে যায়। এটি এমন একটি প্রেমে গল্প যা জীবনের সব থেকে খারাপ সময় সূচনা হয়েছিল।' তিনি আরও জানান, 'আমার চরিত্রটা ভীষণ জটিল। এবং এর অনেকগুলো পরত আছে। এতদিন যতগুলো চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি, তার মধ্যে এটা সব থেকে বেশি জটিল।'

কথা আনকাহির দুই মুখ্য চরিত্র
দিল্লির ভেঙ্কটেশ্বর কলেজের ছাত্রী ছিলেন অদিতি, আর সেখানে পড়াকালীন তিনি জি সিনেস্টার কী খোঁজের জন্য মনোনীত হন ২০০৪ সালে। এরপর তিনি সেই শোতে যান এবং অঙ্কিতা লোখান্ডে, শ্রদ্ধা আর্য, দিব্যাঙ্কা ত্রিপাঠীর মতো অভিনেত্রীদের হারিয়ে সেই খেতাব জয় করেন। বিজয়ী হিসেবে তিনি একটি ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ পান। তিন বছর লাগে এই ছবিটি বানাতে। সুভাষ ঘাই এবং জি টিভির উদ্যোগে খান্না এবং আইয়ার ছবিটি তৈরি করা হয়েছিল।
এই শো জেতার পর কী হয়েছিল সেই বিষয়ে তিনি এই সাক্ষাৎকারে জানান, 'আসল প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল এই রিয়েলিটি শো জেতার পর। প্রতিযোগী থাকাকালীন আমরা একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলেও ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু পরে বুঝলাম তেমন কিছুই নয়। প্রতিযোগিতার বিষয়টা আলাদা ছিল। তুমি যেই মুহূর্তে একজন বাইরের লোক হয়ে গেলে শো শেষের পর তোমার সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির আর কোনও যোগাযোগ নেই। কেউ তোমাকে সাহায্য করার জন্যেও নেই। আর এখানে সঠিক সাহায্য এবং সঠিক পথে পরিচালনা করার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। এই ইন্ডাস্ট্রিটা এমন মোটেই নয়, যেখানে আপনি ১০ বছর পর একটা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছাতে পারবে।'
তিনি আরও জানান, 'আমার ছবিটা যখন তিন বছর পর তৈরি হল তখন কিন্তু আমার জন্য যে অনেক অফার অপেক্ষা করেছিল বা কিছু, তেমনটা কিন্তু একদমই নয়। একটাই সুবিধা ছিল যে মিডিয়া আমায় নিয়ে তখনও লিখত, চ্যানেল অনেক প্রমোট করেছিল আমাদের, এটুকুই। আর আমি তখন কলেজ স্টুডেন্ট, কাকে কাজের কথা বলব, কী করতে হবে কিছুই জানতাম না। এমনকি তখন সোশ্যাল মিডিয়াও ছিল না। আমি এখনও এমন অনেক মানুষের সঙ্গে আলাপ করি, যাঁরা এখন দেখা বলেন যে তাঁরা তখন আমায় অনেক খুঁজেছেন কিন্তু পাননি।'
এরপর তিনি সুভাষ ঘাইয়ের সঙ্গেই আরও একটি ছবি করেন, ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’ বলে। এরপর তিনি একাধিক তেলেগু এবং পাঞ্জাবি ছবিতেও কাজ করেন। অভিনেত্রীর কথায়, তাঁর অন্যান্য বন্ধুদের মতো তাঁকে আর্থিক সমস্যায় হয়তো কোনওদিনই পড়তে হয়নি, কিন্তু তাঁকে মানসিকভাবে, ইমোশনালি অনেক প্রতিকূলতা পেরোতে হয়েছে। একটা সময় তিনি বারংবার প্রত্যাখ্যান সহ্য করেছেন। কাজ পাননি। তিনি এই বিষয়ে জানান, 'এভাবেই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ হয়। আমি এভাবেই ম্যাচিওর হয়েছি। আমার পরিবার আমায় খুব সাপোর্ট করেছিল। আমার মা যিনি পেশায় একজন শিক্ষিকা ছিলেন তিনি তাঁর কাজ ছেড়ে আমার সঙ্গে মুম্বাইয়ে এসে থাকতে শুরু করেছিলেন।' এরপর তিনি বলেন, 'আমি এখন খুব লখনউতে যাই। এখানে গত ১৫ বছর ধরে আমি আছি। এখানে আমার এখন এমন বন্ধু তৈরি হয়ে গেছে, যাঁরা পরিবারের মতো। এখন আমি অর্থনৈতিক এবং ইমোশনাল দুইভাবেই স্টেবল হয়েছিল।'
অনেকে অদিতির মতো এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসতে চান, দুচোখে স্বপ্ন নিয়ে মায়ানগরীর উদ্দেশে পাড়ি দেন। তাঁদের জন্য অভিনেত্রী বলেন, 'অবশ্যই গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে একটা ছবি তৈরি কোর্স করে তাঁরা যেন এখানে আসেন। আমি ছবি তৈরি কোনও কোর্স করিনি, কিন্তু গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছিলাম। রিয়েলিটি শো জেতার পর আমার পরিবার আমায় আবার কলেজে পাঠিয়েছিল পড়াশোনা শেষ করার জন্য।'