'নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান'। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব লেগেই রয়েছে। ৭১-এর আন্দোলন হোক কিংবা ১৯৯৯ সালের রক্তাত্ব কার্গিল, পুলওয়ামা হোক বা উরি নানা ভাবে ভারতের উপর আঘাত হেনেছে পাকিস্তান, কিন্তু শেষ হাসি হেসেছে ভারতই। আ꧟র তার মূল কারণ হল ভারতের একতা। তাই উত্তাল পরিস্থিতি হলেও এখন বেঁধে বেঁধে থাকার সময়। আর সেই বার্তাই যেন অভিনেতা 🦹দেবদূত ঘোষের কথায় বার বার প্রতিধ্বনিত হল।
যুদ্ধ কখনওই কাম্য নয়, আর ভারত শান্তিপ্রিয় দেশ। তবে আঘাতের প্রত্যাঘাত তো করতেই হবে, না হলে ভারতের ভদ্রতাকে পাকিস্তান দুর্বলতা ভেবে বসবে। আর বারংবার আঘাত নেমে আসবে দেশের সেনা-জওয়ান থেকে সাধারণ মানুষদের উপর। কিন্তু এর মধ্যেও এক দল ভারতীয় নাগরিক যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার বার্তা দিচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে হিন্দুস্থান টাইমস বাংলার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেবদূত বললেন, 'সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়। এক্ষেত্রে উপায় থাকে না। সন্ত্রাসবাদী শক্তি নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। সেই সন্ত্রাসবাদীদের যারা আশ্রয় দিচ্ছে, এই যুদ্ধ তাদের বিরুদ্ধে।'
কঠোর পদক্ষেপ তো করতেই হবে, তবে তার পাশাপাশি নিরীহ মানুষদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়েও তিনি সমান ভাবে উদ্বিগ্ন। তাঁর কথায়, 'দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে গত রাতে সমস্ত লাইট বন্ধ রাখা হয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়েছে। মানুষের রুজি-রুটিতেও টান পড়েছে। ফলে এই পরিস্থিতিতে, যদি বড় ভাবে যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়, সে ক্ষেত্রে কোনও দেশই চলতে পারে না। তাই ভারত সমস্যার সমাধান চায়। ভারতের একটাই চাওয়া, পাকিস্তান উগ্রপন্থীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে। সরকার সেখানে ব্যবস্থা নেবে এবং ভারতের হাতে যারা আমাদের দেশে ঢুকে আমাদের সহ নাগরিক তথা ভাই-বন্ধুদের হত্যা করেছে, তাদের সঠিক বিচার হবে। দুই দেশ এই বিষয়ে কঠোর হবে। এটাই আমরা কামনা করি। আর সাধারণ মানুষের নিরিখে দেখতে গেলে দু'পক্ষেরই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আসলে একটা যুদ্ধ হলে তো এই ক্ষয়ক্ষতিটা এড়ানো সম্ভব নয়। পাশাপাশি আমাদের মতো যাঁরা খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ তাঁদের সব থেকে বড় আশঙ্কা থাকে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি নিয়ে। সেটা নিয়ে তো অবশ্যই একটা চিন্তার জায়গা রয়েছে।'
তবে দেবদূতের মতে পাকিস্তানের আঘাতের ধাক্কা ভারত ঠিক সামলে উঠতে পারবে তার বল ও বুদ্ধি দিয়ে। অভিনেতার কথায়, 'পাকিস্তান তো খুব গোছানো একটা দেশ না। তাই তাঁদের আঘাতটাও খুব গোছানো হবে না। গতকালই ওদের সেনা প্রধানকে অপসারিত করা হয়েছে। ফলে ওখানে এই পরিস্থিতিতে এইসব চলতেই থাকবে। সেই জায়গায় ভারত শান্তি-প্রিয় একটা দেশ। আমাদের দেশের উদ্দেশ্য তো শান্তি রক্ষা, আর তা করতে গিয়েই যুদ্ধের পথ অবলম্বন করতে হচ্ছে। ভারতের আসল লক্ষ্য কিন্তু সন্ত্রাসবাদকে শেষ করা।'
তবে পহেলগাঁও তো প্রথম নয় এর আগেও একাধিকবার পাকিস্তানের নানা আক্রমণের মোকাবিলা করতে হয়েছে ভারতকে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল কার্গিলের যুদ্ধ। ১৯৯৯-এ শীতকালীন চুক্তিভঙ্গ করেছিল পাক সেনারা। প্রবল তুষারপাতের জন্য শীতকালে কাশ্মীরে ছেড়ে 💎যাওয়া ভারতীয় ঘাঁটিগুলির দখল নিয়েছিল তারা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ১-ডি জাতীয় সড়কটিকে দখল করে ভারত থেকে লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। কারণ লাদাখ বিচ্ছিন্ন হলে পাকিস্তান নির্বিঘ্নে দখল করে নেবে সিয়াচেন হিমবাহের। এই সিয়াচেন হিমবাহ নিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানে দ্বন্দ বরাবরের। কিন্তু পাকিস্তানকে তখনও রণাঙ্গনে ভারতীয় সেনাবাহিনী পরাস্ত করেছিল। কিন্তু তার আগে কার্গিল হয়ে উঠেছিল এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ময়দান।
সেই ভয়াবহ যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে দেবদূত বলেন, 'পাকিস্তানকে সেই সময় পরাস্ত করতে আমাদের সামরিক বলিদান দিতে হয়েছিল। বহু সেনা-জওয়ান শহীদ হয়েছেন। সেই সময় তো পাকিস্তান একটা সুবিধাজনক জায়গায় ছিল। উপর থেকে আমাদের উপর গোলা বর্ষণ করেছিল, গুলি চালাচ্ছিল। ফলে সেই সময় আমাদের সেনা ঘাঁটিগুলো দখল করতে গিয়ে আমাদের বহু সৈন্যকে আত্ম-বলিদান দিতে হয়েছিল। তবে সেই সময় পরিস্থিতি অনেকটা আলাদা ছিল। তাই তখনের সঙ্গে এখনের তুলনা টেনে আনার সময় এটা নয়। আমি এটাই বলব, ভারত যে কারণে প্রত্যাঘাত করেছে। সেই কারণ একেবারেই যথার্থ। ভারত কিন্তু সন্ত্রাসবাদী আস্থানাগুলোর উপর আঘাত হেনেছে। আর এটা হওয়ার প্রয়োজন ছিল। কারণ পাকিস্তানের বোঝা উচিত যে সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে থাকলে তার ফলাফল খুব একটা ভালো হয় না। আশা করব তাদের যেন শুভ বুদ্ধি জাগ্রত হোক।'
কার্গিল চলাকালীন দেশের অর্থনীতিতেও তো তার একটা প্রভাব পড়েছিল। কিন্তু দেবদূতের মতে কার্গিল হোক বা করোনা সবটাই ভারত সামাল দিয়েছেন তাঁর জনগণের ঐক্যবদ্ধ মনের জোরে। তাঁর কথায়, 'আমরা কার্গিল দেখেছি, করোনাও দেখেছি, আয়লাও দেখেছি। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের খুব ভালো একটা গুণ হচ্ছে, আমরা সেই সময় সবাই সব বিভেদ ভুলে এক হয়ে যেতে পেরেছি। এই একতাই আমাদের শক্তি। আর কার্গিল যুদ্ধের সময়ও গোটা দেশের মানুষ সেনাবাহিনীকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিল। আসলে পাকিস্তানের আচরণের জন্যই ভারতবাসী পাক-বিদ্বেষী। এটা পাকিস্তানকে বুঝতে হবে।'